কথায় আছে ‘বস ইজ অলওয়েজ কারেক্ট(boss is always correct)’। কর্পোরেট কালচারে চাকরি টিকিয়ে রাখতে এটা হল কর্মীদের মূলমন্ত্র। বস যদি দিনকে রাত আর রাতকে দিন বলে, তা হলে সেটাই ঠিক। বসের ভুল ধরানো মানেই আপনি বসের চক্ষুশূল। আর হবেন নাই বা কেন বলুন, যে বসকে নিয়ে আপনার টিমমেটরা এত মাতামাতি করছেন আর আপনি কিনা তারই ভুল বার করবেন সে হয় নাকি! তা ছাড়া চাকরি জীবনে বস হল সেই বটবৃক্ষের মত যার শরণাপন্ন হলে তবেই উন্নতি না হলে ইশ্বর সহায়। ভাবছেন তো সপ্তাহান্তে হঠাৎ বস আর অফিস নিয়ে এত কথা কেন বলছি? কারণ, আজ, ১৬অক্টোবর, যে বস ডে!
এমনিতে বারো মাসই বসকে ঘিরে থাকে কর্মীদের একরাশ ক্ষোভ। কিন্তু যিনি বস তিনিই কেবল বোঝেন দায়িত্বের বোঝা কাকে বলে। তাই তাঁর সামনে অধঃস্তন কর্মচারীরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও তাঁর অনুপস্থিতিতে যে তাঁকে নিয়ে কী বলা হয় তা বস ‘ হাড়ে হাড়েই টের পান’। আর এই ভাবেই ‘টম অ্যান্ড জেরির’ সম্পর্ক এক রকম চলছিল যা আমূল বদলে গেছে এই কোভিডকালে। করোনার আতঙ্ক এখন আর নেই ঠিকই তবে কোভিড পরবর্তী এই সময় বদলে গেছে অনেক কিছু।
এখন শুধু পদ আঁকড়ে কর্তৃত্ব ফলানো নয়, বরং ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে ‘টিম লিডারের’ কংসেপ্ট বা ধারনা। ওয়ার্ক ফ্রম হোম কালচারে প্রথাগত অফিসের কাজের ধরন যেমন অনেকটাই পাল্টেছে তেমনি পাল্টেছে ‘বস বা ম্যানেজারেদের’ ভূমিকা।কোভিড পরবর্তী ‘নিউ নর্মালে’ অনেকেই চাকরি খুইয়েছেন, পদ হারিয়েছেন, কিংবা পরিবারের কাছে থাকতে পদ-প্রাচুর্য্যের থেকে মুখ ফিরিয়ে নতুন জায়গায়, আবার নতুন করে পথ চলা শুরু করেছেন।
আর এই সব বদলের মধ্যেই বদলে গেছে ‘বসের’ সংজ্ঞা খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে ‘টিম লিডার’।কর্ত্বত্য ফলানো আর নয় বরং এমন একজন ব্যক্তি যে সঠিক ভাবে নেতৃত্ব দিতে পারেন এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে সক্ষম।
শুধু যে শারীরিক তা তো নয় মানসিক ভাবেও করোনার আতঙ্ক বিভিন্ন ভাবে প্রভাব ফেলেছে অধিকাংশের জীবনে। পারিবারিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখিন সকলেই। আর এখানেই ভাল ‘টিম লিডারদের’ কদর বেড়েছে। ‘টিমমেটদের’ ভাললাগা-মন্দলাগা যাতে কাজে প্রভাব না ফেলে এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে চলতে হচ্ছে। তাদের সমস্যার কথা বুঝতে হচ্ছে। মানুষ হিসেবে কেউই ‘পার্ফেক্ট’ নন। আবার প্রত্যেকের কর্ম দক্ষতা আলাদা আলাদা। সেগুলি নিয়ে বুদ্ধি করে চলতে পারেন একজন ভাল ‘বস’। আর তিনি-ই সঠিক ‘টিম লিডার’। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে অধিক বেতনের তুলনায় ভাল বসকে বেছে নেন অধিকাংশ কর্মচারী। তাই ভাল বস হতে গেলে এই কাজগুলো এড়িয়ে চলুন।
• আপনার কথাবার্তায় স্পষ্টতার অভাব থাকা
• পক্ষপাতিত্ব করা
• কর্মচারীদের চাকরী ও ব্যক্তিগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলা
• কোনও টিমমেট বা কর্মীদের অনুপস্থিতিতে তাঁকে নিয়ে গালমন্দ করা।
• কাজ সংক্রান্ত বিষয়ে টিমমেটদের ফিডব্যাক কিংবা দৃষ্টিকোণকে গুরুত্ব না দেওয়া।
• প্রত্যেকটি বিষয়ে কর্তৃত্ব ফলানো।নিজের প্রচার করা।
• নিজের আচার আচরণ নিয়ে সচেতনতার অভাব।
• টিমমেটসদের কেউ ভরসা করে আপনাকে কোনও কথা জানালে, সেই কথা বাকিদের বলা।
• শুধুমাত্র নিজের কথা বলা। অন্যের কথা না শোনা কিংবা বাকিদের বলতে না দেওয়া।
তাই এখন বসের বদলে টিম লিডার হিসেবে কাজ করার চেষ্টাই করছেন অনেকে। কোভিডকালে আতঙ্কের পরিবেশে, টিমমেটদের পাশে থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন নিউ নর্মালের বসেরা থুড়ি টিম লিডাররা। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই দায়িত্ব বাড়বে অনেক বেশি। তবে সাফল্যের পথ নিঃসন্দেহে প্রশস্ত হবে। আপনি বস হলে তো আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। তবে চাকরি করলে আজ বস না হলেও ভবিষ্যতে বস হবেন, তখন এই বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন। দিনের শেষে বস সত্যি সেই বটবৃক্ষের মতই, কোনও কাজ করার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হলে, সমস্যা দেখা দিলে সমস্যার সহজ সমাধান করবেন তিনিই।