Placeholder canvas
কলকাতা শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ |
K:T:V Clock
চতুর্থ স্তম্ভ : ধ্বংস করে দাও আমাকে ঈশ্বর, আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By: 
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৮:৫১:৪৬ পিএম
  • / ২১৯ বার খবরটি পড়া হয়েছে

দু’জন ব্যারাকপুরে, একজন ইলামবাজারে এবং তালিকা এখানে শেষ নয়৷ প্রতিদিন বিভিন্ন রাজ্যে খুন হচ্ছে, আত্মহত্যা করছে।  এমন নয় যে তারা জীবন যুদ্ধে পরাজিত, তারা লড়াই শুরু করার আগেই শেষ হচ্ছে তাদের জীবন, শেষ করছে তাদের জীবন।  সেই ছেলেমেয়েদের বয়স কত? ১২ কি ১৩ থেকে শুরু আর ২৩ কি ২৪ এ শেষ।  ২০২১ – ২২ এ দেশ জুড়ে এই মৃত্যু সংখ্যায় কেবল আত্মহত্যাই ৮৭ হাজারের বেশি।  দু’জন কিশোর খুন হল ব্যারাকপুরে, খুনি, মাস্টারমাইন্ড তার সাকরেদরা ধরা পড়েছে।  বাবা মা বন্ধু, আত্মীয়রা বিচার চাইছেন।  হবে, তাও হবে।  কিন্তু যারা চলে গেল তারা তো ফিরে আসবে না।  এবং তার থেকেও বড় কথা এই হত্যা, এই মৃত্যু বেশ কিছু প্রশ্ন আমাদের সামনে রেখে গেল, যার জবাব আমাদের খুঁজতে হবে, না হলে কালকের হত্যা, আত্মহত্যা আপনার বা আমার ঘরেই হবে। 

খবরে জানা গেল যে দুই কিশোর খুন হয়েছে তাদের একজনের বাইকের নেশা ছিল, সে বাইক চালাতো, বাইকের ব্যাপারের নানান খবর রাখতো, সে একটা দামী বাইক কেনার চেষ্টা করছিল, সেটা কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকা অ্যাডভান্স ও দিয়েছিল।  কোথা থেকে সে এই টাকা পেল? তথ্য বলছে সে নাকি অনলাইন গেমের এক উইজার্ড ছিল, নেটে গেম খেলেই সে জমিয়ে ফেলেছিল ৫০ হাজার টাকা।  তার বয়স? ১৫/১৬।  এবং তার বাবা মা, বাড়ির বড়রা কেউ এই খবর রাখতেন না৷ খবর ছিল না তাদের কাছে যে তাঁদের আত্মজ অনলাইন গেম উইজার্ড, সে হাত ঘোরালেই টাকা আসে।  তার বাবা কে দেখে মাকে দেখে, বাড়ির লোকজনকে দেখে মোটেই বড়লোক মনে হয়নি৷ সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার, কিন্তু তাদের সন্তান একটা দু’লাখি কি তিন লাখি বাইকে চড়ে হুউউউস করে উড়ে যেতে চায়, সেই গতির জন্য তার মেধা সে কাজে লাগিয়েছে, একটার পর একটা কঠিন লেভেল পার করেছে, পয়েন্ট জমা হয়েছে তার মোবাইল অ্যাপে৷ তারপর সে সেটাকে এনক্যাসও করেছে। 

এ ও একদিনে হয়নি৷ কিন্তু তার অভিভাবকেরা কিছুই জানেন না, আর কী কী জানতেন না? আরও কত গোপন ক্ষত ছিল, কত বীভৎস ক্ষয় রোগ বাসা বেঁধেছিল জানা গেল না৷ জানার আগে সে খুন হয়েছে।  ইলামবাজারে যে খুন হল, তার বন্ধুর অনেক টাকা চাই, তারাও কিশোর, একজন পলেটিকনিক পড়ুয়া, একজনের বাবার অনেক টাকা আছে, অতএব তাকে তার বন্ধু নিয়ে বের হল, তারা মদ আর বিরিয়ানি খেল, মদ শেষ, আবার আনা হল, তারপর তাকে খুন করল তার বন্ধু, ফোনে জানালো ৩০ লক্ষ টাকা চাই।  ৩০ লক্ষ টাকার জন্য তার ছোটবেলাকার বন্ধুকে খুন করল, অসুখটা কোথায়?

এটা কি বিচ্ছিন্ন কোনও ব্যাপার? এই খুনিকে গ্রেফতার করে সাজা দিলেই থেমে যাবে এই অপরাধ৷ কিংবা ধরুন মাত্র ১৩ বছরের কিশোর, বেঙ্গালুরুতে থাকে আগস্ট মাসের ঘটনা, দেশ যখন আজাদি কা অমৃত উৎসবে মেতে আছে, সেই ১৫ আগস্টে সে গলায় দড়ি দিয়েছে, মা ডাক্তার, বাবা আইটি প্রফেসনাল টের পাননি ঘুনপোকা বাসা বেধেছিল তাদের একমাত্র সন্তানের মাথায়।  সে নাকি বন্ধুদের কাছ থেকে ৩০০০ টাকা ধার করেছিল, বন্ধুরা ফেরত চাওয়ায় কিছুদিন স্কুল যাচ্ছিল না৷ তারপর সে ১৫ তারিখ গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েছে।  কেন টাকা ধার নিয়েছিল? সে অনলাইন গেম খেলছিল, হারছিল, কিন্তু জিতবে বলেই আবার খেলছিল, ধার করেই খেলছিল।  তার ডাক্তার মা জানেন না, তার আই টি প্রফেশনাল বাবাও টের পাননি।  ১৮ বছরের কন্যা, নাম ধরুন ভিনিতা, মহারাষ্ট্রের শোলাপুরের বাসিন্দা, বাবা নেই, মা কাজ করেন স্থানীয় পুরসভায়, তার মৃতদেহ আর সুইসাইড নো পাওয়া গেল রেল লাইনের ধারে।  সে তার মায়ের গয়না বিক্রি করে অনলাইন গেম খেলেছে, হেরেছে, শেষ পর্যন্ত নিজেকে শেষ করেছে।  আর চিঠিতে বেরিয়ে এসেছে এই অনলাইন গেমের অন্য চেহারা।  সে ডিটেইল পাওয়া গেল বিনিতার চিঠিতে।  সে গেম খেলে হাজার পাঁচেক টাকা জিতেছিল, তারপর সে তার মায়ের গয়না বন্ধক রেখে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে গেম খেলতে নামে, সে এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা মত জিতেছিল, সেই সময় তার অ্যাপ বন্ধ হয়ে যায়, বিনিতা অ্যাপ অথরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে, তারা জানায় সার্ভার ডাউন, মেরামতির কাজ চলছে। কিছুদিন পরে বিনিতা দেখে ওই অ্যাপ আর কাজই করছে না, যোগাযোগ করলে আর উত্তর আসছে না।

এদিকে যে দোকানে সোনার গয়না বন্ধক রেখেছিল, তারা চাপ দিতে থাকে। বিনিতা রেল লাইনে মাথা দেয়, আত্মহত্যা করে।  বিনিতার স্কুল, কলেজের শিক্ষিকারা জানিয়েছেন বিনিতা অত্যন্ত মেধাবী মেয়ে, বিনয়ী, ভদ্র। কেউ জানেনি কখন অজান্তে সে টাকা রোজগারের জন্য এই শর্টকার্ট পথ বেছে নিয়েছিল, তার মা তো কিছুই জানতেন না, তিনি জানতেন না যে তাঁর সন্তানের কাছে স্মার্ট ফোনও আছে।  সারা দেশ থেকে এই খবর যখন আসছে তখন জানা গেল আমাদের কলকাতায় নাকি এমন একজন আছে, যিনি এই ব্যবসা চালান, তাঁর খাটের তলা থেকে পাওয়া গেল ১৭ কোটি টাকা।  মাত্র ১৭ কোটি তো সারা দেশের ব্যবসা হতে পারে না৷ এর সঙ্গে আরও বড় মাথারা আছে, অনেকে আছে, একটা অ্যাপ নয় অসংখ্য আছে এবং তারা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে আছে তাদের ধরাও যাবে না, ছোঁয়াও যাবে না।

আমাদের সন্তান সন্ততিরা এই বিশ্বজোড়া ফাঁদের সামনে অসহায়, সত্যিই অসহায়।  কোনটা খেলা, কোনটা ফাঁদ বোঝার আগেই জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে এই পণ্যবাদের জালে আটকে পড়া কৈশোর, যৌবন।  তার চোখের সামনে হুউউস করে ছুটে চলা ২/৩/৪ লাখি মোটরগাড়ি, বার্বি ডলের মত সুন্দরী বা ম্যাচো যুবক, মোবাইলের ক্রমশ বাড়তে থাকা ফিচারস, পাটায়ার রাত, লাস ভেগাসের ক্যাসিনো, নাইট ক্লাবে ডিস্কোথেকের মুভিং লাইটস, সাটারডে নাইট ফিভার তাদের আচ্ছন্ন করছে, মাকড়সার জালের মত আষ্টেপৃষ্টে জড়াচ্ছে, তারপর অচানক সেই কিশোর হয়ে উঠছে খুনি, কিশোরি গলায় দড়ি দিচ্ছে।  আওরা শেষ মৃত্যুটা দেখছি, তার আগে ঘটে যাওয়া এক দীর্ঘ ঘটনাবলি আমাদের জানাই নেই।  জানাই নেই ব্যারাকপুরের ওই ছেলেটি অনলাইন খেলে কিভাবে টাকা জমিয়েছিল, তার কেনই বা দরকার ছিল একটা দামি বাইক, হাজার ৫০ এ তো বাইক পাওয়াই যেত। না এসব তথ্য মুছে গেছে তার হত্যার সঙ্গে সঙ্গেই।  অন্যধারে যে খুন করল, এক পেশাদার খনির অত খুনের পরিকল্পনা করলো, সে এই সাহস পেল কোথা থেকে? কোন বিপন্নতা তাকে দু দুটো প্রাণ কেড়ে নিতে উসকে দিল? জানা নেই। 

যেমন জানা নেই কৈশোরের বন্ধুকে অনায়াসে কেমন করে খুন করল এক কিশোর? যার সঙ্গে মিনিট খানেক আগে সে বসে বিরিয়ানি খেয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর হাওয়ায় ভাসছে, ইথার তরঙ্গে দুলছে, যার উত্তর জানা নেই। এবং সেইজন্যই এই হত্যা বা আত্মহত্যার তদন্তে খুব একটা ফারাক হবে না, আবার কদিন পরেই সাত সকালে উঠে খবর পাবেন আপনার পাড়ার মুখচোরা, বিনয়ী ছেলেটি হয় আত্মহত্যা করেছে, না হলে খুন করেছে। এই গোপন ক্ষয় এ আটকাতে হলে সমাজে আরও সম্প্রীতি দরকার, সময় যত বিপন্ন হবে, ততই বেঁধে বেঁধে থাকার প্রয়োজনীয়তাই বাড়বে, সয়াজ হয়ে উঠছে অজস্র ছোট ছোট দ্বীপ, সেসব নির্জন দ্বীপে বেড়ে উঠছে মেধা, সে মেধা কখনও আমাদের চমকে দিচ্ছে, আমরা একটুখানি ছেলের সৃষ্টি দেখে, তার লেখা পড়ে, গান শুনে, তার আঁকা ছবি দেখে হাততালি দিচ্ছি, অন্য দ্বীপে ঠিক তখনই সেই মেধা মানুষ খুনের পরিকল্পনা করছে কিংবা আত্মহননের।  আপাতত আমাদের প্রার্থনা করা ছাড়া উপায় কী? সেই বাবরের প্রার্থনা।  হুমায়ুন অসুস্থ এক দুরারোগ্য আসুখে শয্যাশায়ী।  বাবর প্রার্থনা করে বলেছিলেন, আল্লা, আমাকে নিয়ে নাও, আমার সন্তানকে আঁচিয়ে রাখো।

এই তো জানু পেতে বসেছি, পশ্চিম

আজ বসন্তের শূন্য হাত—

ধ্বংস করে দাও আমাকে যদি চাও

আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।

কোথায় গেল ওর স্বচ্ছ যৌবন

কোথায় কুড়ে খায় গোপন ক্ষয়!

চোখের কোণে এই সমুহ পরাভব

বিষায় ফুসফুস ধমনী শিরা!

জাগাও শহরের প্রান্তে প্রান্তরে

ধূসর শূন্যের আজান গান ;

পাথর করে দাও আমাকে নিশ্চল

আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।

না কি এ শরীরে পাপের বীজাণুতে

কোনোই ত্রাণ নেই ভবিষ্যের

আমারই বর্বর জয়ের উল্লাসে 

মৃত্যু ডেকে আনি নিজের ঘরে ?


না কি এ প্রাসাদের আলোর ঝলকানি

পুড়িয়ে দেয় সব হৃদয় হাড়

এবং শরীরের ভিতরে বাসা গড়ে

লক্ষ নির্বোধ পতঙ্গের ?

আমারই হাতে এত দিয়েছ সম্ভার

জীর্ণ ক’রে ওকে কোথায় নেবে ?

ধ্বংস করে দাও আমাকে ঈশ্বর

আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১ ১২
১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮১৯
২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫ ২৬
২৭ ২৮ ২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

Aajke | মাননীয় বিকাশবাবু, মামলা করুন, চাকরি আটকান
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
Fourth Pillar | কী মুসলমান, কী খ্রিস্টান, দেশের সংখ্যালঘুরা বিপন্ন
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
‘শিল্পের নতুন গন্তব্য বাংলা’ কী বললেন মমতা?
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
ফের রাজ্যে অস্ত্র উদ্ধার
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
ছেলেরাও ফুটবলার হবে? ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে কী বললেন মেসি?
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
আমেরিকায় ভিসা বাতিল হওয়া বিদেশি ছাত্র ছাত্রীদের অর্ধেকই ভারতীয়!
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
নেই হেড কোচই, সুপার কাপকে গুরুত্ব দিচ্ছে না মোহনবাগান!
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
সুকান্ত চালে শুভেন্দু কাত
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
ওয়াকফ সংশোধনী আইন ঘিরে উত্তাল মুর্শিদাবাদ, মালদায় আশ্রিত ঘরছাড়া পরিবার
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
৩০টিরও বেশি ওষুধ এবার নিষিদ্ধ করল কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
ছেলের পরিবর্তে পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাবার অস্ত্রোপচার, গাফিলতির অভিযোগ রাজস্থানের কোটায়
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
মুর্শিদাবাদের দুই থানার আইসি বদল! নতুন আইসি কে জানুন
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
ভারতের ২.৯ মিলিয়ন গ্রাহককে বিজ্ঞাপন দেবে না গুগল, জানুন আসল কারণ
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
মালদহে পৌঁছলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে চলন্ত বাসে আগুন!
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team