নয়াদিল্লি: কংগ্রেসের নড়বড়ে ভিত মজবুত করতে বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানকে হাতিয়ার করে দেশের যুবসমাজকে কাছে টানার চেষ্টা করে থাকেন সোনিয়া-রাহুল-প্রিয়াঙ্কা গান্ধী৷ এবার ওই ত্রয়ীর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে বুধবার জাতীয় মুখপাত্রের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন কংগ্রেসের তরুণ নেতা জয়বীর শেরগিল৷ সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে শেরগিল জানিয়েছেন, দলের নীতি নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি দেশের যুবসমাজের আশা-আকাঙ্খার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷ এমনকী গত এক বছরে গান্ধী পরিবারের অফিসেও তিনি ঢুকতে পারেননি৷ একরাশ বিরক্তি নিয়ে শেষপর্যন্ত দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শেরগিল৷
গত আট বছর ধরে কেন্দ্রে ক্ষমতার বাইরে কংগ্রেস৷ তারপর যত সময় গড়িয়েছে ততই পায়ের তলায় জমি হারিয়েছে তারা৷ একাধিক রাজ্যে বিরোধী দলের মর্যাদা হারিয়ে কংগ্রেস তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে নেমে এসেছে৷ রাজস্থান, ছত্তীশগড়, ঝাড়খণ্ড এবং বিহার ছাড়া এই মুহূর্তে বড় কোনও রাজ্যে তারা ক্ষমতায় নেই৷ তার মধ্যে রাজস্থান ও ছত্তীশগড় ছাড়া বাকি দুই রাজ্যে তারা জোট সরকারের শরিক৷ ইতিমধ্যে কংগ্রেস ছেড়ে অন্য দলে চলে গিয়েছেন বহু নেতা৷ তবে শেরগিল এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসে থাকলেও দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন৷ ৩৯ বছর বয়সি আইনজীবী শেরগিল কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিভাবান তরুণ নেতা৷ গত কয়েকদিন ধরে তাঁর ইস্তফা নিয়ে জলঘোলা হচ্ছিল৷ দলের সাংবাদিক বৈঠকগুলিতে তাঁকে দেখা যাচ্ছিল না৷ সেই শেরগিল এদিন গান্ধী পরিবারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে সংবাদসংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘বাস্তব থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছেন কংগ্রেসের নীতি নির্ধারকরা৷ আমি গত এক বছরে অনেকবার রাহুল, সোনিয়া এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছি৷ কিন্তু আমাকে অফিসে ডাকা হয়নি৷’ গত আট বছরে দলের জন্য নিরলস কাজ করে গিয়েছেন বলে দাবি শেরগিলের৷ তবে গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলতে রাজি হননি৷ জয়বীরের বিস্ফোরক অভিযোগ, কংগ্রেস নেতৃত্বকে পরিচালিত করছেন স্তাবকরা৷
কিছুদিন আগেই প্রবীণ নেতা গুলাম নবি আজাদ কাশ্মীরের নির্বাচন সংক্রান্ত কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন৷ একইভাবে গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ আনন্দ শর্মা হিমাচল প্রদেশের নির্বাচন কমিটি থেকেও পদত্যাগ করেছেন৷ ওই দু’জনই কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ জি-২৩ গোষ্ঠীর সদস্য৷ দলের উঁচু থেকে নিচুতলা অবধি সংগঠনের নেতৃত্বে আমূল বদল ও নির্বাচন চেয়ে জি-২৩ গোষ্ঠী দাবি জানিয়ে আসছে৷ আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে কংগ্রেস সভাপতি পদেও নির্বাচন হওয়ার কথা৷ কিন্তু সভাপতি পদ গ্রহণে রাহুল এখনও রাজি না হওয়ায় সেই নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে বলেও জল্পনা চলছে৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, নেতৃত্বের সংকটে ভুগতে থাকা কংগ্রেসের অন্দরে অন্তর্কলহ এতে আরও বাড়বে৷ যা আদতে বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসেবে কংগ্রেসের ভিতকেই দূর্বল করে দেবে৷ দলের এই সংকটকালে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী চিকিৎসার জন্য দু-একদিনের মধ্যে বিদেশে চলে যাচ্ছেন৷ মায়ের সঙ্গী হচ্ছেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কাও৷ দিল্লি ফেরার আগে সোনিয়া ইতালিতে তাঁর অসুস্থ মাকে দেখতে যাবেন৷