মহা বেকায়দায় মধুসূদন !
না, ইনি দেবতা বা কবি নন, এই মধুসূদনের পুরো নাম মধুসূদন মিস্ত্রি, সর্বভারতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান৷ এই মুহুর্তে ফাটা বাঁশে আটকে আছেন তিনি৷ হয়তো ভাবছেন, দলের সভাপতির শূণ্যপদ পূরণ করার জন্য শেষে না সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে আবেদনপত্র চাইতে হয় ! কারণ দলের পরবর্তী সভাপতি নির্বাচনের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা করা হয়েছে মধুসূদন মিস্ত্রিকেই৷ কিন্তু তিনি ‘পারফর্ম’ করার সুযোগই পাচ্ছেন না৷ জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা তৈরি করে বসে আছেন মধুসূদন মিস্ত্রি৷ কিন্তু দলের সভাপতি কে হবেন তা এখনও স্থির হয়নি৷ কোনও নামই ফাইনাল হয়নি বলে মনোনয়ন পত্রও জমা পড়েনি৷ কাজ শুরু করতেই পারছেন না মধুসূদন৷
বিয়ের আসর প্রস্তুত, তবে বর এখনও ঠিক হয়নি৷ রাহুল গান্ধীকে দলের সভাপতি হওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও তিনি সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেসের পরবর্তী সভাপতি হিসেবে বিকল্প নাম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ মাথায় রাখা দরকার, ১৯৯৮ সালে শেষবার গান্ধী পরিবারের বাইরে কংগ্রেসের কেউ সভাপতি হতে পেরেছিলেন৷ সে বার সভাপতি হয়েছিলেন সীতারাম কেশরী। তবে ‘খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’ বলার থেকে যদি বলা হয়, গান্ধী পরিবারের পছন্দসই নাম পাওয়া যাচ্ছে না, তবেই ঠিকঠাক বলা হয়৷ আর এসব কারণেই নির্বাচনের সপ্তাহ চালু হয়ে গেলেও মধুসূদন মিস্ত্রি আপাতত হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন৷
কংগ্রেসের পরবর্তী প্রধান কে হবেন, দলের শীর্ষনেতারাও জানেন কি’না সন্দেহ৷ স্বাস্থ্যের কারণে সোনিয়া গান্ধী সভাপতি পদে ফিরতে রাজি নন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন৷ পরবর্তী সময়ে প্রস্তাব যায় রাহুল গান্ধীর কাছে৷ রাহুলও সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পরই দলীয় সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন রাহুল৷ তার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি ওই সিদ্ধান্ত থেকে নড়েননি৷ কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের আবেদন ধারাবাহিকভাবেই খারিজ করছেন
তিনি। সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ হলেও চর্চার কেন্দ্রে এসেছে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নামও। তবে কোনও নামেই এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত সিলমোহর লাগেনি৷ দলের পরবর্তী সভাপতি নিয়ে গড়ে ওঠা অচলাবস্থা দূর হওয়ার কোনও ইতিবাচক সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না। কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হলেও অনিশ্চয়তার মেঘ কাটার লক্ষ্মণও নেই৷ তবে কংগ্রেসের শীর্ষস্তরের তরফে এই সমস্যা নিয়ে ‘অফিসিয়াল’ কোনও মন্তব্য এখনও কেউই করেনি।
এদিকে শোনা যাচ্ছে, যেহেতু রাহুল গান্ধী এখনও নারাজ, তাই সভাপতি নির্বাচন পিছোনোর দাবি উঠেছে দলের অন্দরে৷ এই অংশের নেতাদের কথা, আর কিছুদিন সময় পেলে রাহুলকে রাজি করানো যেতে পারে৷ সেই সময়টা দেওয়া হোক৷ এই যুক্তি সামনে এনেই কংগ্রেসের সভাপতি পদের নির্বাচন আরও কিছু দিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন কংগ্রেসের ‘রাহুলপন্থী’ তরুণ ব্রিগেডের নেতারা৷ গান্ধী পরিবারের আস্থাভাজনেরা পাশাপাশি আরও একটি কৌশল নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন৷ গান্ধী পরিবারের আস্থাভাজন কাউকে সভাপতি পদে বসানো। তেমন হলে রাহুল গান্ধীই রিমোটে দল চালাতে পারবেন৷ রাহুল গান্ধী সভাপতি না হলেও গান্ধী পরিবারের হাতেই কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। তবে এমন সিদ্ধান্তে ওয়ার্কিং কমিটিতে ঝড় উঠতে পারে।
কংগ্রেসের সর্বোচ্চ মহলের অনেকেই ঘনিষ্ঠমহলে বলছেন, এবার যিনি কংগ্রেস সভাপতি হবেন তাকে নরেন্দ্র মোদীর মোকাবিলা করতে হবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে৷ ওদিকে মাস চারেকের মধ্যেই গুজরাত, হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন। ২০২৩-এর গোড়ায় ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়ে ভোট। এই রাজ্যগুলির কোনওটিতেই কংগ্রেসের খুব একটা ভাল ফল করার আশা নেই। রাহুল-ঘনিষ্ঠদের আশঙ্কা, এই মূহূর্তে কংগ্রেস সভাপতি পদের দায়িত্ব নিলে প্রথমেই রাহুল গান্ধীর উপরে দলের খারাপ ফলের দায় এসে পড়বে।
এই পরিস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার কাজটি কঠিন৷ ফলে শুধুই রাহুল নন, সেভাবে কেউই রাজি হচ্ছেন না দলের সভাপতি হতে৷ বেশ কয়েক মাস আগেই জানানো হয় দলীয় নির্বাচনের কর্মসূচি৷ নির্ধারিত সেই সূচি অনুযায়ী, রবিবার, ২১ অগাস্ট থেকেই কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। দলের সিদ্ধান্ত, ২১ অগাস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দলের সভাপতি নির্বাচন সেরে ফেলা হবে। কিন্তু সেই ২১ তারিখ এলেও কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এর প্রধান ও একমাত্র কারণ, রাহুল গান্ধী এখনও স্পষ্ট করেননি, তিনি সভাপতি হতে রাজি আছেন কি’না৷ আজ এই পরিস্থিতিতেও কংগ্রেসের অন্দরে পরিবারতন্ত্র এতটাই শক্তিশালী৷
আর এই সব কারণে সুযোগ পেয়েও কংগ্রেসের ‘ত্রাতা’-র ভূমিকায় সেভাবে অভিনয় করতেই পারছেন না হতাশ এই মধুসূদন৷ বেচারা মধুসূদন মিস্ত্রি৷