কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্ম ৷ আর এই দিনটিই দেশজুড়ে জন্মাষ্টমী হিসেবে পালন করা হয়৷ জন্মাষ্টমীতে গোপালের পুজোয় সবথেকে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল ভোগ। এদিন ৫৬ রকমের ভোগ অর্পণ করা হয় বাল গোপালকে। ভাত, ডাল, লুচি, পায়েস, তালের বড়া, ক্ষীর মালপোয়া, লস্যি কী থাকে না। আর এই রকমারি খাবারের মধ্যে যেটা সবচেয়ে প্রিয় গোপালের তা হচ্ছে মাখন, মিছরি। যেটা ছাড়া এক কথায় গোপালের ভোগ অসম্পূর্ণ । তবে, এই ৫৬ ভোগের পিছনে এক পৌরাণিক গল্প রয়েছে।
কথিত আছে যে, গোকূলে নন্দলাল ও যশোদার ঘরে যখন ছোট কৃষ্ণ বাস করতেন, দিনে আটবার তাঁকে খাওয়াতেন মা যশোদা। একবার ভালো দেবরাজ ইন্দ্রকে তুষ্ট করতে ব্রজবাসীরা খুব বড় করে ইন্দ্র পুজোর আয়োজন করেন। ইন্দ্র খুশি হলে ভালো বৃষ্টি হবে এবং বৃষ্টি ভালো হলে ফসল ভালো হবে। তখন কৃষ্ণ তাঁদের বলেন, ‘ভালো বৃষ্টি করানো ইন্দ্রের কাজ, তার জন্য তাঁর পুজো কেন করতে হবে? বরং পুজো করতে হলে গোবর্ধন পর্বতের পুজো করা উচিত, কারণ এই পর্বত ফলমূল শাকসবজি দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে।’ সবাই কৃষ্ণের সঙ্গে সহমত হন এবং ইন্দ্রের বদলে গোবর্ধন পুজো করা শুরু করেন। এতে অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে দেবরাজ ইন্দ্র বিপুল বৃষ্টিপাত দেন। সেই প্রবল বৃষ্টির তোড়ে সবকিছু প্রায় ভেসে যায়। বাড়ি ঘর হারিয়ে সকলে তখন ছোট্ট কৃষ্ণের শরণাপন্ন হন। কৃষ্ণ তখন আঙুলের ডগায় গোবর্ধন পর্বত তুলে নেন। সেই পর্বতের নীচে তখন প্রবল দুর্যোগ থেকে আশ্রয় নেন গোকূলবাসী। সাত দিন কিছু না খেয়ে গোবর্ধন পর্বত নিজের আঙুলের ডগায় তুলে রাখেন কৃষ্ণ। অষ্টম দিনে নিজের ভুল বুঝতে পেরে বৃষ্টি থামান ইন্দ্রদেব। তখন কৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বতকে যথাস্থানে রাখেন। এই সাত দিন তিনি এক ফোঁটা খাবার বা জল মুখে দেননি। তাঁর জন্য রক্ষা পায় পুরো গোকূল। দিনে আট বার করে খাদ্য গ্রহণের হিসেব করে সাত দিনের হিসেবে তাঁর জন্য ৫৬ রকম পদ তৈরি করেন গোকূলবাসী। তারপর থেকে জন্মাষ্টমীতে ছাপ্পান্ন ধরনের ভোগ দেওয়ার রীতি রয়েছে।
এই ৫৬ ভগে কী কী থাকে?
৫৬ ভোগে থাকে ২০ ধরনের মিষ্টি, ১৬ রকমের নোনতা খাবার এবং ২০ রকমের শুকনো ফল। সাধারণত ৫৬ ভোগে ঘোল, ক্ষীর, বাদাম দুধ, টিক্কি, কাজু, আমন্ড, পেস্তা, রসগোল্লা, জিলিপি, লাড্ডু, রাবড়ি, মাঠরি, পায়েস, মালপোয়া, মোহনভোগ, চাটনি, মুগ ডালের পুডিং, পিঠে, খিচুড়ি, বেগুনের তরকারি দেওয়া হয়। এছাড়া সবজির পুর দেওয়া কচুরি, সবুজ তরকারি, দই, ভাত, ডাল, ঘেভর, পাপড় দেওয়া হয়ে থাকে। এ বছর তিথি অনুযায়ী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পালিত হতে চলছে ১৮ ও ১৯ অগস্ট। এক সপ্তাহ আগে থেকেই মন্দিরে মন্দিরে শুরু হয়ে যায় জন্মাষ্টমীর প্রস্তুতি।
গোপালের মূর্তিকে নতুন বস্ত্র পরিয়ে মাখন-মিছরি সহযোগে ৫৬ ভোগ নিবেদন করার
প্রথা রয়েছে।