কলকাতা, ২১ জুলাই: সড়কে জনসমুদ্র। কালো-কালো মাথায় মুড়ে গিয়েছে গোটা ধর্মতলা চত্বর। ইতিউতি ছড়িয়ে আরও কয়েক লাখ। ততক্ষণে কালো করে এসেছে গোটা আকাশ। মঞ্চে উঠলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। শুরু হল মুষলধারা। নিজে হাতে ছাতা ধরে মঞ্চে উঠলেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড।
শুরুতেই সকলের মন কেড়ে নিলেন। তিনি যে বর্তমান প্রজন্মের আইকন। মা-মাটি-মানুষের নেতা। মানুষের নেতা। তিনি ছাতা মাথায় বক্তব্য পেশ করবেন, এটা আবার হয় নাকি!
না, হয় না। হলও না। নিজে ছাতা সরিয়ে দিলেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাতা সরালেন মঞ্চের সামনে জড়ো হওয়া লাখো লাখো মানুষ। হাত তুলে অভিষেকের সঙ্গে থাকার বার্তা দিলেন। বিরোধীরা নিশ্চয় ততক্ষণে বুঝে গিয়েছেন, কেন অভিষেক আগামীর আইকন। আর রাজ্যের মানুষ উপলব্ধি করে ফেলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক লোকের হাতেই দলের ব্যাটন তুলে দিয়েছেন। ঠিক নেতার হাতেই আগামীর ভার গিয়েছে।
ভিড়ে ঠাসা ধর্মতলা
তিনি বললেন, ‘‘বৃষ্টি শুভ। যতবার ২১ জুলাই বৃষ্টি হয়েছে বিরোধীরা ধুয়ে গিয়েছে। এ বারও ২১ জুলাইয়ের সর্বকালীন রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে।” একুশের জমায়েত দেখে অভিষেকের মন্তব্য, শেষবার ছিলাম যুব সভাপতি। এত ভিড় দেখিনি। আমার দেখে ভাল লাগছে। এই বৃষ্টিতেও কেউ আসন ছাড়েননি। এই জেদই এগিয়ে নিয়ে যাবে তৃণমূলকে। এই জেদ শুধু পঞ্চায়েত নির্বাচন নয়। দিল্লির বুকে গণতান্ত্রিক গঠনমূলক সরকার তৈরির সূচনা এই সমাবেশ।’’
আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: দাদাদের জল বয়ে পঞ্চায়েতে টিকিট মিলবে না, ২১ এর মঞ্চে ফের হুঁশিয়ারি অভিষেকের
মঞ্চ থেকে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বিজেপিকে আক্রমণ শুরু করলেন অভিষেক। যে ভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আমলে দেশে বেকারত্ব বেড়েছে, জিনিসের অগ্নিমূল্য, তেল-গ্যাসের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে- তা নিয়ে সুর চড়ান অভিষেক। তৃণমূল সাংসদের কথায়, বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে দেশকে ভাগ করে দুর্নীতির রাজনীতি করে চলেছে। তাঁর চ্যালেঞ্জ, বাংলার টাকা বাংলা জোগাবে, দিল্লির কাছে হাত পাতবে না পশ্চিমবঙ্গ। অভিষেক জানালেন, প্রকল্প হলে শুধু বাংলার নামেই হবে। বাংলা আবাস যোজনা হবে। বাংলা সড়ক যোজনা হবে। তাতে যদি কেন্দ্র টাকা না দিতে চায় বাংলার সেই টাকা লাগবে না। বাংলা কেন্দ্রের ভরসায় ছিল না। থাকবেও না।
একুশের সভা থেকে অভিষেকের বার্তা, ২১ জুলাই শুধু তৃণমূলের প্রতি জনতার সমর্থনের মাপকাঠি নয়। বললেন, ‘‘২১ জুলাই হার না মানার মানসিকতা, বুক চিতিয়ে মাঠে নেমে রক্ত দিয়ে লড়াই করার মানসিকতা। তাই এ বছর ২১ এর নতুন শপথ। তৃণমূল কংগ্রেস করতে হলে মানুষকে গুরুত্ব দিতে হবে। তৃণমূল নিজের করে খাওয়ার জায়গা নয়। যদি তাই করতে হয়, তবে ঠিকাদারি করুন। আর না হলে তৃণমূল করুন। কিন্তু তৃণমূল করতে হলে নিঃস্বার্থ ভাবে করতে হবে। নির্ভীক, নির্লোভ ভাবে করতে হবে।’’ অভিষেক জানালেন, ‘‘তৃণমূল করতে গেলে দলীয় অনুশাসন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিন্তাধারা, নেত্রীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে উৎসর্গীকৃত হয়ে করতে হবে।’’