কলকাতা: এক দম্পতির শুকিয়ে যেতে বসা দাম্পত্য রসায়নাগারে নতুন বাতাস আনতে ইকো পার্কের ঠিকানা বাতলালেন বিচারপতি। এ কাহিনী ৮ বছর নিজের মধ্যে প্রায় কথা না বলা এক দম্পতির। যাদের আগামী দুই দিন ইকো পার্কের বেঞ্চে বসে গল্প করার নির্দেশ বিচারপতি কৌশিক চন্দের। ইকো পার্কের জলাশয়ের ঠান্ডা বাতাস গায়ে মেখে, সবুজ ঘাসের গালিচায় পাশাপাশি হেঁটে দুই মনের মাঝে তৈরি হওয়া পাঁচিল ভাঙার চেষ্টা করলেন বিচারপতি।
এ এক অন্য রকমের গল্প।
তখনও মাস খানেক হয়নি। ফাটল দেখা দিতে শুরু করেছিল। বিয়ের তিন মাস পেরনোর আগেই শ্বশুর ঘর ছেড়েছিল মেয়েটা। লেক গার্ডেন্সের মৌসুমি দাস (নাম পরিবর্তিত) সে দিন সোজা চলে গিয়েছিলেন বাপের বাড়িতে। উচ্চশিক্ষিতা মৌসুমি আর ফিরতে চাননি সন্তোষপুরে। এ কথা-সে কথায় বারবার এড়িয়েও গিয়েছেন সন্তোষপুরের সাধন রায় (নাম পরিবর্তিত)-এর প্রসঙ্গ।
সময় যত গড়িয়েছে, দাম্পত্যে ফাটল ততই চওড়া হয়েছে। তত দিনে কেটে গিয়েছে সাত-সাতটা বছর। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত সাধনের বিরুদ্ধে এবার আদালতে অভিযোগ করেন মৌসুমি। অভিযোগ করা হয় পারিবারিক গাহস্থ্য হিংসার। মধ্য তিরিশের মৌসুমির অভিযোগ ছিল, বিয়ের সময় তার বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া সোনার গয়না, আসবাব-সব কিছুই আটকে রেখেছেন সাধন। সে দিনের এফআইআর-এ সাধনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ছিল মৌসুমির।
আদালতের চিঠি পেয়ে চমকে গিয়েছিলেন সাধন। পুরো বিষয়টি নিয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেন। তাঁর বিরুদ্ধে করা এফআইআর খারিজের আবেদন জানান। মামলাটি যায় বিচারপতি কৌশিক চন্দের কাছে।
দেড় বছর এভাবে চলার পর গতকাল, বৃহস্পতিবার বিচারপতি চন্দ মৌসুমি-সাধনকে ডেকে পাঠান নিজের চেম্বারে। বেশ কিছুক্ষণ তাদের কথা শোনেন। তখন তিনি যেন কোনও আইনজ্ঞ নন। বিচারপতি চন্দ তখন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত দুই উচ্চশিক্ষিত বিবাহিত নারী-পুরুষের অভিভাবক। নিজের মতো করে বোঝান তাদের।
এর পরই বিচারপতির নির্দেশ, বিচ্ছেদ নয়, আপাতত দু’দিন একান্তে কাটাতে হবে মৌসুমি-সাধনকে। কোথায় কাটাবেন তাঁরা একান্তে দুই দিন? ঠিকানা বাতলে দেন বিচারপতি নিজেই। বলেন, ইকো পার্কে দু’দিন সময় কাটাতে হবে তাঁদের। উদ্দেশ্য একটাই, সম্পর্ক ভাঙতে বসা এক দম্পতিকে একটু একান্তে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া। যাতে তাঁরা নিজের মনের কথা খুলে একে অপরকে বলতে পারেন। যদি তাতে নিজেদের মধ্যে বছর আটেক ধরে জমা হতে থাকা অভিমান-অভিযোগ-অনুযোগের পাহাড়ে চিড় ধরতে পারে। একটু কাছে আসতে পারেন তাঁরা। তার পর বাকিটা…