তাঁদের ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবন শেষ বয়সে টিকে ছিল না। প্রেম করেই বিয়ে হয়েছিল সদ্য পুরাতন পরিচালক তরুণ মজুমদারের সঙ্গে অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের। প্রেম এবং তারপর পরিণয়। প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালে ‘একটুকু বাসা’ এবং ‘আলোর পিপাসা’ এই ছবি দুটিতে তরুণ মজুমদারের সঙ্গে কাজ করেছিলেন সন্ধ্যা রায়। সদ্যপ্রয়াত পরিচালকের শোকে বিহু্বল টলিউড। জীবনের শেষের বেশ কয়েকটা বছর আলাদাই থাকতেন তরুণবাবু। তবুও প্রাক্তন স্ত্রী সন্ধ্যা রায়ের চোখের জল বাধ মানছে না। তাদের এই আলাদা থাকা নিয়ে নানান গুঞ্জন শোনা গিয়েছে শিল্পীমহলে। অনেকের মতেই তাদের আইনত বিচ্ছেদ কখনো হয়নি। একের পর এক জনপ্রিয় বাংলা ছবিতে সন্ধ্যা রায় কাজ করেছেন স্বামী-পরিচালক তরুণ মজুমদারের সঙ্গে। পরবর্তীকালে ‘ফুলেশ্বরী’, ‘ঠগিনী’ ‘পলাতক’,’নিমন্ত্রণ’,’কুহেলি’,’সংসার সীমান্ত’র মতন কালজয়ী ছবির নাম বলা যেতে পারে। বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর কথায়, তরুণবাবুর সঙ্গে ২৫ বছরের স্মৃতি সন্ধ্যা রায় কখনো ভুলতে পারবেন না। মন খারাপ বাংলা ছবির আরেক অবিস্মরণীয় অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়ের ও। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন,তপন সিনহার সঙ্গে একই পংতিতে রাখতে চান তিনি তরুনবাবুকে। তরুণ বাবুর গণদেবতা ছবিতে কাজ করেছিলেন মাধবী। তিনি অবশ্যই সত্যজিৎ রায়ের নায়িকা। কিন্তু তরুণ বাবুকে ও তিনি পরিচালক হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করেন। অভিনেত্রীর কথায় তরুণবাবু তাঁর কাজের মধ্যে দিয়েই আজীবন বেঁচে থাকবেন। তরুণ মজুমদারের চার খন্ডের বই পড়লে তাঁর চলচ্চিত্র সম্পর্কে যে জ্ঞান তা বোঝা যায়। শুধু তাই নয়, চলচ্চিত্রে সংগীতের ব্যবহার এবং ফটোগ্রাফি নিয়েও ছিল তাঁর দারুন অভিজ্ঞতা। তরুণবাবুর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কথা বলেছেন মাধবী মুখোপাধ্যায়। দুঃখ প্রকাশ করেছেন তরুণ- সন্ধ্যার বিচ্ছেদ নিয়ে। বাংলা ছবির আর একজন বর্ষিয়ান প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তীও তরুণ বাবু সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করেছেন। তিনিও তরুণবাবুর ‘ফুলেশ্বরী’ ছবিতে কাজ করেছেন। ‘ফুলেশ্বরী’ ছবিতে কাজ করার আগে লিলি মুম্বইতে থাকতেন তারপর এই ছবির সুবাদে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে এসেছিলেন। পরিচালকের একমাত্র ছবিতে লিলি কাজ করলেও তাঁর সমস্ত ছবি তিনি দেখেছেন। তরুণবাবু যে একজন নিরঅহংকারী মানুষ ছিলেন সে কথা ‘ফুলেশ্বরী’ অভিনেত্রী বারবার মনে করিয়ে দেন। তিনি ছিলেন একজন মাটির মানুষ।