কিংবদন্তি পরিচালক তরুণ মজুমদার আজ সোমবার এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সকাল ১১.১৭ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি গত ১৪ জুন পরিচালকের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে আইসিইউ তে ভর্তি হয়েছিলেন। শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকায় ৯২ বছরের বর্ষিয়ান এই পরিচালকের করণা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাছাড়াও ২০০০ সাল থেকে কিডনি র সমস্যায় তিনি ভুগছিলেন। সেই সঙ্গে ফুসফুসের সমস্যা ছিল। ডায়াবেটিসও ছিল। তরুণবাবুকে ডায়ালিসিস দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসকরা বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে তরুণবাবু চলে গেলেন না ফেরার দেশে। প্রসঙ্গত, যে সময় সত্যজিৎ রায়,মৃণাল সেনের মতো পরিচালকরা বাংলা চলচ্চিত্র জগতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, সেই সময় বড় পর্দায় পারিবারিক কাহিনী ফুটিয়ে তুলতে শুরু করেছিলেন তরুণ বাবু। ‘যাত্রিক’ নামে একটি পরিচালকদের দল তৈরি করেছিলেন তিনি। এই দলের প্রথম ছবি ‘চাওয়া পাওয়া’। অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন,তুলসী চক্রবর্তী। ছবিটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। এরপর একের পর এক ছবি তৈরি করে বক্স অফিসে সাফল্য পেয়েছিলেন পরিচালক তরুন মজুমদার। নিজের কাজ সম্পর্কে একবার তিনি বলেছিলেন যে সিনেমা মানে শুধুই ব্যাকরণ আর প্রযুক্তি নয়, দর্শক টিকিট কেটে পরিচালকের পাণ্ডিত্য দেখতে আসেন না। দর্শকরা আসেন ভালো গল্পের খোঁজে আমি তাই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে একটা ভালো গল্প বলার চেষ্টা করি। মানুষের সঙ্গে মিশতে অসম্ভব ভালবাসতেন পরিচালক। বাণিজ্যিক ছবির দুনিয়ায় তরুণ মজুমদারই ছিলেন বাঙালি পরিচালকদের শিক্ষক। কিভাবে চলচ্চিত্রের ভাষায় গল্প বলতে হয়, দর্শককে টেনে বসিয়ে রাখতে হয় সেই জাদুমন্ত্র জানা ছিল এই বাঙালি পরিচালকের। কিভাবে ঘষে-মেজে শিল্পীদের হীরের টুকরোতে পরিণত করা যায় তা তাপস পাল থেকে মহুয়া রায় চৌধুরীকে দেখলেই বোঝা যায়। এমন কত-শত বাঙালি শিল্পী তাঁর আবিষ্কার। মহুয়া থেকে ঋতুপর্ণা মৌসুমী চ্যাটার্জী থেকে দেবশ্রী রায় টলিউডের এইসব নায়িকাদের কাছে তরুণবাবু নিছক কোন পরিচালক ছিলেন না, ছিলেন অভিভাবক। মৌসুমিকে বাড়ি থেকে এনে ক্যামেরার সামনে অভিনয় করিয়েছিলেন পরিচালক। রুমকি রায়কে ‘দেবশ্রী’ নামটা দিয়েছিলেন তরুণবাবু। বাঙালি দর্শকদের তাপস পালকে চিনিয়েছিলেন সেই তরুণবাবু।বাংলা চলচ্চিত্র তাঁর হাতে সমৃদ্ধ হয়েছে। বাংলা ছবির এই জনপ্রিয় পরিচালক তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের একাধিক বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। পেয়েছেন পদ্মশ্রী সম্মান।১৯৯০ সালে পরিচালক পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৬৫ সালে ‘আলোর পিপাসা’ এবং’একটুকু ভালোবাসা: নামের দুটি ছবি তৈরি করেছিলেন তিনি। তারপর একের পর এক জনপ্রিয় এবং বাণিজ্য-সফল বাংলা ছবি উপহার দিয়েছেন তরুন মজুমদার। সেই তালিকায় রয়েছে ‘বালিকা বধ,’ ‘কুহেলী’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘আপন আমার আপন’, ‘গণদেবতা’, ‘চাঁদের বাড়ি’,’ভালবাসা ভালবাসা’, ‘আলো’র মত অসংখ্য বাংলা ছবি। ব্রিটিশ শাসিত ভারতে জন্ম হয়েছিল তরুণ মজুমদারের। বাবা বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার ছিলেন স্বাধীনতার সংগ্রামী। রসায়নের ছাত্র হলেও চলচ্চিত্র তৈরীর প্রতি যোগ ছিল তরুণ মজুমদারের। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বামপন্থায় ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। নিজের কাজ এবং চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য তৈরীর ক্ষেত্রেও অনেক সময় দেখা গেছে তিনি বামপন্থী চিন্তা ভাবনায় প্রভাবিত হয়েছেন।