কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ‘পয়সোঁ সে বাপ ভি বিকতা’। এটা হিন্দি ছবির ডায়ালগ। কিন্তু, মাতৃদুগ্ধ বিক্রি হয়, এটা শুনেছেন কি? হ্যাঁ মায়ের বুকের দুধও চড়া দামে বিক্রি হয়। তাও বিদেশে কোথাও নয়, নরেন্দ্র মোদির ভারতেই। চোখ এতক্ষণে নিশ্চই কপালে উঠে গিয়েছে। না, বিস্ময়ের আর যেটুকু বাকি ছিল সেটাও জেনে রাখা ভালো। এই কোম্পানিটি জলের দরে গরিব মায়েদের বুকের দুধ কিনে ‘মাতৃক্ষীরা’ নামে বিক্রি করে মুনাফা ঘরে তুলছে। এবং তা কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুশ লাইসেন্স নিয়ে।
এশিয়ার মধ্যে ভারতেই এরকম একটি কোম্পানি রমরমিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে। বেঙ্গালুরুর ওই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে এর আগে প্রবল আপত্তি তুলেছিলেন সমাজকর্মীরা। মায়ের দুধের বাণিজ্যিকীরণের প্রতিবাদে তাঁদের আন্দোলনের জেরে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSAI) কোম্পানিটির লাইসেন্স বাতিল করে। তারা জানিয়ে দেয়, তাদের নিয়মবিধি অনুযায়ী মাতৃদুগ্ধ বিক্রির অনুমোদন নেই। কিন্তু, এফএসএসএআইয়ের একটি অভিযানে বেরিয়ে আসে, ওই কোম্পানিটি একই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সেটা ২০২১ সালে আয়ুশ থেকে পাওয়া লাইসেন্সের ভিত্তিতে।
একটি ইংরেজি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বেঙ্গালুরুর এই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালে। কর্নাটকের এফএসএসএআইয়ের থেকে ডেয়ারি উৎপাদন ও পণ্য বিক্রির লাইসেন্স পায় তারা। ব্রেস্টফিডিং প্রোমোশন নেটওয়ার্ক অফ ইন্ডিয়ার (BPNI) তরফে নূপুর বিদলা বলেন, মায়েদের কাছ থেকে দুধ কিনে তা চড়া দামে বিক্রি করতে অনুমতি দেওয়া চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। এই সংস্থা এ ব্যাপারে ২০২০ সালেই সরকারকে সতর্ক করেছিল। কোম্পানির তরফে এমডি সৌরভ আগরওয়াল অবশ্য বলেছেন, তাঁরা গত ৫ বছর ধরে ৫১ হাজারের বেশি প্রিম্যাচিওর শিশুর প্রাণরক্ষা করেছেন এই দুধের সাহায্যে। কারণ, এই দুধ সাধারণত এই ধরনের বাচ্চাদেরই দেওয়া হয়। কিংবা শারীরিক দুর্বলতা বা অসুস্থতার কারণে মা যদি দুধ দিতে অক্ষম হন, সেক্ষেত্রে এই দুধ ব্যবহার করা হয়। তবে, এই ধরনের ক্ষেত্রে দুগ্ধ ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়াই দস্তুর। যে সংস্থাগুলি অলাভজনক। অনেক সরকারি হাসপাতালেই এরকম ব্যাঙ্ক আছে। যারা এরকম ক্ষেত্রে বিনা পয়সায় দুধ সরবরাহ করে। দেশে এরকম অলাভজনক ৮০টি দুগ্ধ ব্যাঙ্ক রয়েছে।
সে জায়গায় এই কোম্পানিটি ৩০০ মিলিলিটার হিমায়িত মাতৃদুধের জন্য সাড়ে ৪ হাজার টাকা দাম ধার্য করেছে। এছাড়াও তারা মায়ের দুধের গুঁড়োও বিক্রি করে। মাতৃদুগ্ধ ব্যাঙ্কিং অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় আহ্বায়ক ডাঃ সতীশ তিওয়ারি বলেন, এটা লজ্জার! যেসব মায়েরা দুধ দিচ্ছেন, তাঁদের কি টাকা দেয় এই কোম্পানি? তাঁরা কি বিনা পয়সায় দুধ সংগ্রহ করছেন! কেউ কিছু জানে না! সংবাদ মাধ্যমটির সাংবাদিক আয়ুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললেও কোনও জবাব মেলেনি।