সালটা ১৮৫৫। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভাগলপুর। ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলন। ইংরেজ আমলে স্থানীয় মহাজন ও দাদন ব্যবসায়ীদের শোষণ ও নিপীড়ন এবং ব্রিটিশদের অত্যাচার থেকে মুক্তির লক্ষ্যে শুরু আন্দোলন। স্থানীয় জমিদার, মহাজন ও ইংরেজ কর্মচারীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন সাঁওতালরা। নেতৃত্বে ছিলেন, সিধু (সিধো) ও কানু (কানহু)। যার ফলাফল, ইংরেজ সিপাহিদের গুলিতে প্রাণ হারান সিধু। কানুকে ফাঁসি দেওয়া হয়। তাঁদের স্মরণ করতেই প্রতি বছর ৩০ জুন দিন পালিত হয় হুল দিবস হিসেবে ।
সেই হুল-স্মরণ দিবসে উপস্থিত থেকে সে দিনের বীর যোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানালেন কলকাতা টিভির সম্পাদক কৌস্তুভ রায়৷ সে দিনের সাঁওতাল পরগনার বীরগাঁথা তুলে ধরলেন৷ যে ভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সামান্য তির-ধনুক নিয়ে লড়াই করেছিলেন সাঁওতালরা তা আবারও মনে করিয়ে দিলেন৷ সেই ইতিহাসের কথা স্মরণ করে কৌস্তুভ রায় বলেন, সে দিন যারা ইংরেজদের সমর্থন করেছিলেন, আজ তাদের হাতেই দেশের ভার৷ এক ভয়ঙ্কর কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আমরা৷ এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের উদ্ধার পেতেই হবে৷ সে দিনের নিহত বীর যোদ্ধাদের প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কৌস্তুভ৷ কথা বলেন, সাঁওতাল পরগনার মানুষজনের সঙ্গে৷ তাঁদের কথা শোনেন৷
দেশকে বাঁচানোর ডাক দিয়ে কৌস্তুভ রায় আরও বলেন, সে দিন যে তেজ-তিতিক্ষা সিধু-কানুরা দেখিয়েছিলেন, সেটা আজ হারিয়ে ফেললে চলবে না৷ সাঁওতালরা লড়াই করে শুরু করেছিলেন৷ ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাঁদের শুরু করা লড়াই-ই এক সময় দাবানলের মতো গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ আজ যাঁরা দেশ চালানোর দায়িত্বে আছেন, তাদের বিরুদ্ধে লড়াইটা এই সাঁওতাল পরগনার মাটি থেকেই শুরু করতে হবে৷
সিধু-কানুকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন কৌস্তুভ রায়
আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ : গুজরাট দাঙ্গা এবং মোদিজী
প্রসঙ্গত বলতে হয়, সাঁওতাল বিদ্রোহের মূল উদ্দেশ্যই ছিল, ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনী এবং অসৎ ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর মহাজনদের শোষণ, অত্যাচার ও নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে একটি স্বাধীন সার্বভৌম সাঁওতাল রাজ্য গড়ে তোলা। তাই স্বাধিকার ছিনিয়ে নিতে ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন সিধু ও কানুর নেতৃত্বে ভাগনাদিহির মাঠে জড়ো হন হাজার হাজার সাঁওতাল৷ এরপর কলকাতার দিকে রওনা হন তাঁরা। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে রাজনৈতিক সংগ্রামের জন্য সেই প্রথম মিছিল বা গণযাত্রার সূচনা হয়েছিল।
এ দিন সেই হুল দিবসের মঞ্চ থেকে দেশকে আর এক বার ‘পরাধীনতা’ থেকে মুক্তির আহ্বান জানান কৌস্তুভ রায়। আরও স্পষ্ট করে বললে, দেশকে আস্তে আস্তে বেসরকারিকরণের পথে নিয়ে যাওয়া, সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠানো কেন্দ্রের সাম্প্রদায়িক বিজেপি-সরকারের বিরুদ্ধে নাম না করে সংঘবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দেন কৌস্তুভ।