হাওড়া: তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাঝির মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ। ‘মা সারদার পুনর্জন্ম হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রূপে’- সম্প্রতি এমনই দাবি করেন উলুবেড়িয়া উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক চিকিৎসক নির্মল মাঝি। নির্মলের এই মন্তব্যের নিন্দা করার পাশাপাশি স্বামী সুবীরানন্দ বলেন, ওনার মন্তব্যে আমরা মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। কখনও কারও দ্বারা যেন এমন নজিরবিহীন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
স্বামী সুবীরানন্দ বলেন, ‘সম্প্রতি এক রাজনৈতিক নেতা বলেছেন, মা সারদা নাকি দেহত্যাগের আগে রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজদের বলে গিয়েছেন, তিনি এর পরে মানবীরূপে দক্ষিণ কলকাতায় আবির্ভূত হবেন। তখন তিনি ত্যাগ, তিতিক্ষা, সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাবেন। মা সারদাকে নিয়ে যে কয়েকটি প্রামাণিক গ্রন্থ এ যাবত প্রকাশিত হয়েছে, তার কোনওটিতেই এই তথ্য নেই। সারদাদেবী সান্নিধ্য লাভ করা সন্ন্যাসী এবং গৃহী ভক্তদের কারও মুখে এ কথা শুনিনি। ওই নেতা কোথা থেকে এই অদ্ভুত তথ্য পেলেন এবং তা প্রকাশ্য সভায় বললেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদকের কথায়, ‘সারদাদেবীর সঙ্গে সন্ন্যাসী, ব্রক্ষ্মচারী এবং ভক্তদের মধ্যে যে ভাবমূর্তি রয়েছে, নেতার উপরোক্ত বক্তব্যে তাতে নিদারুণ আঘাত লেগেছে। মা সারদাদেবী একজন মহীয়সী নারীই নন, তিনি সীতা, রাধারাণী, বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর পর্যায়ের আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। যুগে যুগে অবতারের লীলাসঙ্গিনী রূপে তাঁরা জন্ম নিয়ে থাকেন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে তাঁকে লক্ষ লক্ষ মানুষ একাধারে দেবী ও আপন জননী রূপে নিত্যপুজো করে থাকেন। সুখে, দুঃখে, বিপদে, আপদে তাঁর কাছে শক্তিপ্রার্থনা করেন। মা নিজেই বলে গেছেন বিশ্বের সকলেই আমার সন্তান। ৬৭ বছরের জীবনে তিনি কারও প্রতি রূঢ় কথা বলেননি, কারও অমঙ্গল কামনা করেননি।’
আরও পড়ুন: Adhir Chowdhury: মেট্রো ডেয়ারি মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন অধীর চৌধুরী
স্বামী সুবীরানন্দ বলেন, ‘জীবনে তিনি কখনও কারও দোষ দেখেননি, শেষ বাণী হিসেবে বলে গিয়েছেন, যদি শান্তি চাও, কারও দোষ দেখো না, দোষ দেখো নিজের। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি তাঁর সমদৃষ্টি ছিল। শত্রুও তাঁর মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়নি। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সমস্ত সন্ন্যাসী, ব্রক্ষ্মচারী অত্যন্ত দুঃখ ও ক্ষোভের সঙ্গে মনে করছে, ওই নেতা তাঁর ওই বক্তব্যের দ্বারা আমাদের পরম আরাধ্যা সারদাদেবীর মর্যাদাহানি করেছেন। অগণিত ভক্ত ইমেল, টেলিফোনে আমাদের কাছে তাঁদের ক্ষোভ ও মর্মবেদনা জানাচ্ছে। বাস্তবিক ভাবেই আমাদের মর্মবেদনা প্রকাশ করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমাদের মায়ের অসম্মান দুঃসহ মনে হচ্ছে। কখনও কারও দ্বারা যেন এমন নজিরবিহীন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।’