ভারত–২ আফগানিস্তান–১
( সুনীল ছেত্রী, সাহাল আব্দুল সামাদ) (জুবরিন আমিরি)
ছিয়াশি মিনিটে সুনীল ছেত্রী যখন দুর্দান্ত ফ্রি কিকে ম্যাচের প্রথম গোলটা করলেন তখন মনে হয়েছিল ভারত অবশেষে হারিয়ে দিতে পারল আফগানিস্থান। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দু মিনিটের মধ্যে কর্নার থেকে হেডে গোলটা শোধ করে দিলেন জুবরিন আমিরি। ম্যাচের বয়স টখন ৮৮ মিনিট। তাহলে কি আফগানিস্থানের কাছে আবার আটকে যাবে ভারত? ইতিমধ্যে সুনীল ছেত্রীর বদলে মাঠে নেমেছেন সাহাল আব্দুল সামাদ। এবং মাঠে নামার তিন মিনিটের মধ্যে এই মালয়ালীর পা থেকে বেরিয়ে এল একটি চমৎকার গোল। গোলটা হওয়ার পর ভারতীয় দলের ফুটবলাররা যেভাবে সামাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন তাতে একটা জিনিস পরিষ্কার ম্যাচটা জেতার জন্য কতটা মরিয়া ছিল ইগর স্টিমাকের দল। আফগানরা যেন ফাঁসের মতো ভারতীয়দের বুকের উপর চেপে বসেছিল। সামাদের গোলটা সেই ফাঁস থেকে তাদের মুক্ত করল। কারণ শনিবারের প্রথম ম্যাচে হংকং ৩-০ গোলে হারিয়ে দেয় কম্বোডিয়াকে। এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে টিকে থাকতে গেলে ভারতকে হারাতেই হত আফগানিস্থানকে। এখন যা অবস্থা মঙ্গলবার গ্রুপের শেষ ম্যাচে ভারতকে হারাতেই হবে হংকংকে। কারণ গোল পার্থক্যে এগিয়ে আছে হংকং। ভারতের গোল পার্থক্য +৩ আর হংকংয়ের +৪।
সে মঙ্গলবার যা হবে হবে। শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় শেষ দৃশ্যে যে এত নাটক অপেক্ষা করবে কে জানত। আফগানিস্থান ভারতের চেয়ে ফিফা র্যাংকিংয়ে অনেক পিছিয়ে। কিন্তু তাদের খেলা দেখে সেটা বোঝার উপায় ছিল না। তাদের টিমে স্কিলফুল ফুটবলার ছিল না। কিন্তু চমৎকার পাসিং এবং কভারিংয়ে তারা ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গেছে শেষ মিনিট পর্যন্ত। ভারতের আক্রমণ অনেক বেশি ছিল। তারা কর্নারও পেয়েছে অগুন্তি। কিন্তু দীর্ঘকায় আফগান ডিফেন্ডারদের নাগাল এড়িয়ে গোলের মুখ দেখতে পারেনি। উল্টো দিকে আফগানরা মাঝ মাঠে পাল্লা দিয়ে গেছে ভারতের সঙ্গে। নিজেদের মধ্যে দুর্দান্ত বোঝাপড়া করে তারা বারবার ঢুকে পড়ছিল ভারতের ডিফেন্সিভ জোনে। কিন্তু দুই সেন্টার ব্যাক সন্দেশ ঝিঙ্গন এবং আনোয়ার আলিকে হার মানাতে পারেনি। সন্দেশের পজিশনিং এবং আ্যান্টিশিপেশন ছিল দেখবার মতো। পাশে আনোয়ারও মানানসই। তবে আফগানরা অত লম্বা হওয়া সত্ত্বেও সারাক্ষণ জমিতে বল রেখে খেলে গেল। তাতে সন্দেশদের কাজটা একটু হলেও সহজ হয়েছে। শূণ্যে তাঁরা কতটা পারদর্শী তার পরীক্ষা হল না।
গত কদিন ধরেই ভারতীয় কোচকে সুনীল ছেত্রীর ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি রেগে যাচ্ছিলেন। সত্যিই তো ইগর স্টিমাকের হাতে সুনীল ছাড়া গোল করার লোকই বা কোথায় ছিল। লিস্টন কোলাসো খুবই ভাল খেলছেন এই মরসুমে। কিন্তু শনিবার তাঁর দিন ছিল না। বিরতির একটু পরে তাঁকে তুলে নিতে হল। তবে বাঁ দিক দিয়ে চমৎকার খেললেন আশিক কুরুনিয়ন। এই ছেলেটিকে এবার দলে নিয়েছে এটিকে মোহনবাগান। আগামি আই এস এল-এ মোহনবাগানের সম্পদ হতে পারেন এই লম্বা, ছিপছিপে মালয়ালি। বাঁ দিক দিয়ে তাঁর দুরন্ত গতিতে ওঠা এবং বাঁকানো সেন্টার থেকে অনেক আগেই গোল পেতে পারত ভারত। কিন্তু মনবীর, সুনীলরা সুযোগগুলো নিতে পারেননি। তবে মনবীর এদিন ভাল খেলেছেন। ৯১ মিনিটে সাহালের গোলটা আশিক কুরিয়নের পাস থেকেই। বক্সের সামনে বলটা পেয়ে একটু হোল্ড করলেন আশিক। তারপর এমন নিশ্চিতভাবে বলটা রাখলেন সদ্য মাঠে নামা সাহালের জন্য যে ডান পায়ের প্লেসিংয়ে গোল করতে তাঁর কোনও অসুবিধেই হল না। আধিপত্য নিয়ে খেলেও ম্যাচটা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল। দুই দক্ষিণীর জন্য সেটা হতে পারল না।
আশিক কুরিয়ানের দুর্দান্ত ফুটবলের কথা মাথায় রেখেও দিনের সেরা বাছতে গেলে কিন্তু সেই ৩৭ বছর বয়সী সুনীল ছেত্রীকেই বাছতে হবে। প্রথম থেকেই গোলের জন্য ছটফট করছিলেন ভারত অধিনায়ক। ছয় গজের মধ্য থেকে একটা হেড গোলে রাখতে পারলে অনেক আগেই গোল পেয়ে যান। কিন্তু হতাশ হননি। আশাও ছাড়েননি। ৮৬ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পেল ভারত। সামনে বিরাট ওয়াল। সুনীল বেশি দূর থেকে এসে মারলেন না। আলতো করে ওয়ালের উপর দিয়ে বলটা ভাসিয়ে দিলেন। প্রথম পোস্টের কোণ দিয়ে বলটা ঢুকে গেল গোলে। আফগান গোলকিপার সারাক্ষণ দুর্দান্ত কিপিং করেও বলটা আটকাতে পারলেন না। দেশের জার্সি গায়ে ৮৩টা গোল হয়ে গেল সুনীল ছেত্রীর। শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবেন তা সময়ই বলবে। আপাতত মঙ্গলবার তাঁর কাছ থেকে ভারত আবার গোল চাইছে। হংকংকে হারাতে সুনীল ছেত্রীই যে প্রথম ও শেষ ভরসা।