কম্বোডিয়াকে প্রথম ম্যাচে হারাবার পর এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারত শনিবার মুখোমুখি হবে আফগানিস্থানের। সল্ট লেক স্টেডিয়ামে রাত সাড়ে আটটার সেই ম্যাচে ভারতকে ফেভারিট ভাবা ছাড়া অন্য কিছু ভাবা সম্ভব নয়। প্রথম কথা ফিফা র্যাংকিংয়ে ভারত যখন ১০৬ নম্বরে, তখন আফগানিস্থানের র্যাংকিং ১৫০। দু দেশের মধ্যে সাম্প্রতিককালে দুটি ম্যাচ হয়েছে। এবং সে দুটি ম্যাচেরই ফল হয়েছে ১-১। তবে দুটি ম্যাচই হয়েছে ভারতের মাটির বাইরে। প্রথমটি আফগানিস্থানে, দ্বিতীয়টি দোহায়। ২০২২-এর ফিফা বিশ্ব কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের সেই ম্যাচ দুটির (২০১৯) পর অনেক সময় চলে গেছে। এই সময়ে ভারতীয় ফুটবল দলের যে প্রচুর উন্নতি হয়েছে তা যদিও বলা যাবে না। কিন্তু নিজের দেশে হাজার হাজার সমর্থকদের সামনে সুনীল ছেত্রীদের হারানো যে আফগানদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার তা বলাই যায়। প্রথম ম্যাচে আফগানরা ১-২ গোলে হেরে গেছে হংকংয়ের কাছে। বুধবার বিকেল পাঁচটায় হংকং মুখোমুখি হবে কম্বোডিয়ার।
গত বুধবার ভারত ২-০ গোলে হারিয়েছে কম্বোডিয়াকে। দুটি গোলই ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর। ভারতের কোচ ইগর স্টিমাকের বিশ্বাস ভারত অন্তত ম্যাচটা চার গোলে জিততে পারত। হ্যাঁ, সুযোগ অবশ্য ভারত বেশিই পেয়েছিল। কিন্তু সব সুযোগেই তো গোল হয় না। হয়ওনি। তবে কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের যে একচেটিয়া প্রাধান্য ছিল তা গোলে পরিণত হয়নি। হলে চার গোলে জেতাটা অবাস্তব ব্যাপার ছিল না। সুনীল ছেত্রী ছাড়া ভারতের অপর দুজন ফরোয়ার্ডের মধ্যে লিস্টন কোলাসো যেমন খুবই ভাল খেলেছেন, তেমনই খুবই খারাপ খেলেছেন মনবীর সিং। বিরতির পর মনবীরকে তুলে নিয়ে উদান্ত সিংকে নামানোয় ভারতের আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ে। ভারতের গোল সংখ্যাও বাড়ে। কিন্তু জোড়া গোল করে ফেলার পর ৬৮ মিনিটে সুনীল ছেত্রীকে তুলে নেওয়ার পর ভারত আর গোল পায়নি। বোঝাই যাচ্ছে ৩৭ বছর বয়স হয়ে গেলেও সুনীলই এখনও ভারতের এক নম্বর স্ট্রাইকার। তাঁকে আটকে দিলে ভারতও জব্দ। পারবে কি আফগানিস্থান সুনীলকে আটকাতে?
এশিয়ায় আফগানিস্থানের যে বিরাট সুনাম তা বলা যাবে না। যদিও তারা সেই ১৯৫১ সাল থেকে এশিয়ার ফুটবল সার্কিটে আছে। ১৯৫১-র প্রথম এশিয়ান গেমসের কোয়ার্টার ফাইনালে তারা ভারতের কাছে ০-৩ গোলে হেরেছিল। তারপর থেকে খুব যে এগিয়েছে তা বলা যাবে না। অনেক পরে সেদেশে ক্রিকেট শুরু হয়েছে। কিন্তু রশিদ খান, মহম্মদ নবিদের কল্যাণে আফগানরা যত তাড়াতাড়ি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছে আফগান অধিনায়ক ফারসাদ নুরের আফগান ফুটবল দল ততটা পারেনি। আফগানদের বেশির ভাগ ফুটবলারই বিদেশে খেলেন। সম্প্রতি তাদের দেশে তালিবান সরকারের আগমনে আফগান ফুটবলাররা দেশে না ফিরে ভিয়েতনামে প্র্যাক্টিস করে কলকাতায় খেলতে এসেছেন। তাদের টিমে আছেন মিডফিল্ডার শরিফ মুকাম্মদ, যাঁকে আমরা আই লিগ চ্যাম্পিয়ন গোকুলম কেরালার হয়ে খেলতে দেখেছি। টিমের কোচ অনুস দাস্তগিরের বয়স মাত্র ৩২। এই তরুণ কোচ মনে করেন, ভারতের বিরুদ্ধে গত দুটো ম্যাচে ড্র করার অভিজ্ঞতা তাদের কাজে দেবে। প্রথম ম্যাচে হেরে আফগানরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে তাদের অস্তিত্বের লড়াই।
অধিনায়ক ফারসাদ নূর কিংবা শরিফ মুকাম্মদ যেমন মাঝ মাঠের প্লেয়ার, তেমনই ফয়সল শায়েতেশ কিংবা বালাল আর্জেয়ু হলেন ফরোয়ার্ড। আন্তর্জাতিক ম্যাচে অনেক গোল আছে তাঁদের। কিন্তু ভারতের ব্যাক ফোরকে কি তাঁরা টলাতে পারবেন। ইগর স্টিমাক কম্বোডিয়া ম্যাচে সুযোগ দিয়েছিলেন নতুন দুজনকে। ডান দিকে রোশন নাওরেম এবং বাঁ দিকে আকাশ মিশ্র। খারাপ খেলেননি কেউই। কিন্তু সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং দীর্ঘকায় আফগানদের বিরুদ্ধে তিনি প্রীতম কোটাল এবং শুভাশিস বসুদের ব্যবহার করেন কি না তাই এখন দেখার। সেন্টার ব্যাকে অবশ্যই সন্দেশ ঝিঙ্গন এবং আনোয়ার আলিই খেলবেন। তাঁদের বসানোর কোনও নেই। যেমন গোলে গুরপ্রীত সিংয়ের কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই এই দলে।
লিস্টন কোলাসো এবং সুনীল ছেত্রী থাকায় ভারতের ফরোয়ার্ড লাইন খুব খারাপ নয়। বিশেষ করে বাঁ দিক দিয়ে লিস্টনের দ্রুত গতিতে ওঠা এবং তার পর ভেতরে কাট করে ঢোকার মধ্যে যে মুন্সিয়ানা আছে তা তাঁকে অনেক দূর নিয়ে যাবে বলেই মনে হয়। ভারতের আসল সমস্যা কিন্তু মাঝ মাঠে। ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজ, অনিরুদ্ধ থাপা, সুরেশ সিংরা যতই বল নিয়ে দৌড়ন না কেন, ভাল পাস বাড়ানোর ক্ষমতা তাদের কম। উচ্চতায় খাটো হওয়ায় হেডিংও ভাল নয়। এই মাঝ মাঠ দিয়ে আফগানিস্তান ম্যাচ হয়তো উতরে যাবে। কিন্তু এশিয়ান কাপে বড় টিমগুলোর বিরুদ্ধে ভারতকে বেকায়দায় পড়তে হবে। তবে ভারতের যা শক্তি তাতে আফগানদের হারানো হয়তো অসম্ভব হবে না। কিন্তু গোল পাওয়ার জন্য সুনীল নির্ভরতা যে কবে কমবে সেটাই এখন দেখার। আফগানদের বিরুদ্ধে সেটাই ভারতের অগ্নিপরীক্ষা।