গোকুলম কেরালা–৪ এটিকে মোহনবাগান–২
(লুকা মাজশেন–২, রিশাদ, জিতিন) (প্রীতম কোটাল, লিস্টন কোলাসো)
আই লিগ চ্যাম্পিয়ন গোকুলম কেরালার বিজয়রথ দুরন্ত গতিতে ছুটল এ এফ সি কাপেও। এতটাই তাদের দুরন্ত গতি যে তা ছিটকে দিল অনেক শক্তিশালী দল এটিকে মোহনবাগানকে। গোকুলমের ইতালিয়ান কোচ ভিনসেঞ্জো আ্যালবার্তো আগেই বলেছিলেন মোহনবাগান অনেক বড় দল। তাদের বাজেট আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু মাঠে তো আর বাজেট খেলবে না, খেলবে এগারো জন ফুটবলার। তাই আমরা একেবারেই ভীত নই। বুধবার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে গোকুলম দেখাল, বাজেট নয়, খেলে ফুটবলাররাই। এবং সেই লড়াইয়ে এটিকে মোহনবাগানকে দুরমুশ করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে প্রথম ম্যাচেই অনেকটা এগিয়ে গেল। এই গ্রুপের সেরা দল এটিকে মোহনবাগানই। অন্তত কাগজে কলমে। সেই দলের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে জিতে গোকুলম কিন্তু অনেক এগিয়ে রইল। ছয়টি গোলই হয়েছে বিরতির পর। প্রথম ৪৫ মিনিট যে মোহনবাগানকে দেখা গিয়েছিল, সেই মোহনবাগানকে বিরতির পর পাওয়া যায়নি। চোটের জন্য হুগো বুমো মাঠেই নামতে পারেননি। তার উপর বিরতির একটু আগে লুকাকে ট্যাকল করতে গিয়ে নিজেই চোট পেয়ে বসে যান সেন্টার ব্যাক তিরি। তিরিকে বাদ দিয়ে মোহনবাগান ডিফেন্স যেন মাঝি ছাড়া নৌকা। সন্দেশ ঝিঙ্গনও ছিলেন না টিমে। তিরির অনুপস্থিতিতে প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাস, শুভাশিস বসুরা আটকাতে পারেননি গোকুলম অ্যাটাকারদের। তাই যে টিমটা প্রথম ৪৫ মিনিট ম্যাচে দাপটে খেলল, সেই টিমটাই বিরতির পর চার গোল খেয়ে গেল। একটা প্লেয়ারের চোট শেষ করে দিল এটিকে মোহনবাগানকে।
গোকুলমের ফুটবলারদের মধ্যে একটা ব্যাপার প্রথম থেকেই পরিষ্কার ছিল। যতই নামী টিম হোক মোহনবাগান, তাদের জন্য আলাদা সমীহ নয়। আর ম্যাচটা জিততে হবে। মোহনবাগান বলে পালিয়ে গেলে হবে না। নিজেদের ডিফেন্সকে গুছিয়ে নিয়েই তারা আক্রমণে যাচ্ছিল। কিন্তু মোহনবাগান তো জিততেই নেমেছিল। তাই তারাও শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে থাকে। বাঁ দিক থেকে বল নিয়ে উঠে দুর্দান্ত সেন্টার করলেন লিস্টন কোলাসো। হেডে গোলে রাখতে পারলেই গোল পেতেন রয় কৃষ্ণ। কিন্তু এদিনের মোহন অধিনায়কের হেড বারের উপর দিয়ে উড়ে গেল। একটু পরেই জনি কাউকোর কাছ থেকে বল পেয়ে কৃষ্ণের চমৎকার প্লেসিং পোস্টের তলায় লেগে মাঠের বাইরে চলে যায়। এটিকের মতো দলের বিরুদ্ধে সদ্য আই লিগ জয়ী গোকুলমকে তখন বেশ অসহায় লাগছিল। মাঠে জাঁকিয়ে বসেছে মোহনবাগান। কিন্তু গোকুলম জানত তারা তাদের চেয়ে অনেক ভাল দলের বিপক্ষে নেমেছে। তাই প্রথম দিকে ঝড় ঝাপ্টা আসবে এটা মাথায় নিয়েই তারা মাঠে নেমেছিল।
তাদের চার বিদেশিই এই সময় ম্যাচটা ধরার চেষ্টা করলেন। মিডফিল্ডার শরিফ মুখাম্মদ তাদের অধিনায়ক। মাঝ মাঠটা নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। ডিফেন্সের স্তম্ভ হলেন বৌমা আমিনৌ। আর সামনের দুই স্ট্রাইকার হলেন লুকা মাজশেন এবং জর্ডন ফ্লেচার। এই চারজন মিলেই শেষ করে দিলেন মোহনবাগানকে। বিরতির পর মাত্র পনেরো মিনিটের একটা ঝড়ে কুপোকাত হল মোহনবাগান। ৫০ মিনিটে শরিফের বাড়ানো বলে গোল করলেন লুকা। তিন মিনিটের মধ্যেই গোল শোধ করল মোহনবাগান। ডেভিড উইলিয়ামসের কর্নারে ডান পায়ের টোকায় গোল শোধ করলেন প্রীতম কোটাল। কিন্তু চার মিনিটের মধ্যে আবার এগিয়ে গেল গোকুলম। এবার লুকার পাস থেকে গোল করলেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রিশাদ। কিন্তু তখন গোলের জন্য মরিয়া হয়ে গেছে গোকুলম। ৬৫ মিনিটে বাঁ দিক থেকে জর্ডন ফ্লেচারের সেন্টার থেকে গোল করলেন লুকা। ম্যাচ তখনই শেষ। কিন্তু মরিয়া মোহনবাগান তখনও গোলের জন্য মরিয়া। তবে এবার কিন্তু গোকুলম ডিফেন্স এবং তাদের গোলকিপার রক্ষিত ডাগর কোনও রকম রেয়াত করেননি বাগানকে। জুয়ান ফেরান্দো এই সময় নামান কিয়ান নাসিরিকে। কিন্তু এই ধরনের ম্যাচে তিনি যে বেমানান তা আবার বোঝা গেল।
তবে মোহনবাগান একটা গোল শোধ করল ৮০ মিনিটে। বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিকে গোল করলেন লিস্টন কোলাসো। কিন্ত গোকুলমের গোলের ক্ষুধা তখনও মেটেনি। তাই ৮৯ মিনিটে পরিবর্ত ফুটবলার জিতিন গোল করে ৪-২ করলেন। বাকি দুটো ম্যাচে গোকুলম চার পয়েন্ট পেলেই তারা সেমিফাইনালে চলে যাবে।