কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: সংবাদ-স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক সূচকে আরও আট ধাপ নীচে নেমে গেল ভারত। গত ৩ মে ছিল ওয়ার্লড প্রেস ফ্রিডম ডে। দুনিয়ার দেশে দেশে সংবাদ মাধ্যম কী আবস্থায়, কতটা স্বাধীনতায় কাজ করছে তার একটা তালিকা প্রত্যেক বছর প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’। তাদের প্রকাশিত রিপোর্টে ১৮০টি দেশের মধ্যেভারত স্থান পেয়েছে ১৫০-এ। আমাদের থেকেও খারাপ অবস্থায় রয়েছে আর মাত্র ৩০টি দেশ। এটা ২০২১-এর রিপোর্ট। ২০২০-তে ভারতের অবস্থান ছিল ১৪২। আমরা গত এক বছরে আট ধাপ নেমেছি নরেন্দ্র মোদী জমানায়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে এখনও ১৩ জন সাংবাদিক জেলে রয়েছেন। উত্তরপ্রদেশে হাথরসের ঘটনা কভার করতে গিয়ে বন্দি হয়েছিলেন সিদ্দিকি কান্নান। তিনি এখনও জেল থেকে ছাড়া পাননি, সে কথা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশে সম্প্রতি থানার ভিতরে সাংবাদিকদের বিবস্ত্র করার ঘটনাটিরও উল্লেখ রয়েছে ওই রিপোর্টে। গতকাল দিল্লিতে এই রিপোর্ট নিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিয়ান উইমেন প্রেস কোর অ্যান্ড প্রেস অ্যাসোশিয়েশন। তাঁদের দাবি ভারতে যে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বিপন্ন তা ফুটে উঠেছে ওই রিপোর্টে। যদিও সোসাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে হিন্দুত্বাদী ভক্তরা বলছেন, এসব রিপোর্টের নাকি কোনই মূল্য নেই। ভারত সঠিক দিশাতেই এগোচ্ছে।
শুধু সংবাদ মাধ্যম নয়, আন্তর্জাতিক সূচকে আরও বহু ক্ষেত্রেই আমাদের দেশ পিছিয়ে পড়ছে নরেন্দ্র মোদী জমানায়। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জার্মানির বার্লিনে প্রায় দেড় হাজার প্রবাসী ভারতবাসীর সমনে রাজীব গান্ধীর একটি উক্তি তুলে ধরে বলার চেষ্টা করেন তাঁর আমলে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রকাশিত বাৎসরিক করাপশন ইনডেক্সে ভারত এখনও কেন তলানিতে পড়ে আছে। আমাদের প্রতিবেশী ভুটানও আমাদের থেকে এ ব্যাপারে অনেক এগিয়ে। অবশ্য কেউ বলতেই পারেন, আমাদের অবস্থা পাকিস্তানের থেকে অনেকটা ভালো। সেই কৃতিত্ব অবশ্য বিজেপির নয়। সেই কৃতিত্ব আমাদের দেশে যারা গণতন্ত্রের ভিত শক্ত করেছেন। নরেন্দ্র মোদীর আমলে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্রের সূচকে, খিদের সূচকে ভারত পিছিয়ে পড়েছে। ভারতের গণতন্ত্রকে অনেক দেশ এখন তুরষ্কের সাথে পুটিনের রাশিয়ার সঙ্গে তুলনা করছে। ভারতকে বলা হচ্ছে ‘ইলেক্টেড অটোক্র্যাসী’। এই উপহারও ভারতবাসী পেয়েছে নরেন্দ্র মোদী জমানাতেই। হিন্দুত্বাদী ভক্তরা অবশ্য বলছেন, ওই সব বিদেশি রিপির্টের কোনওই মূল্য নেই। ভারত সঠিক দিশাতেই এগিয়ে চলেছে।
আরও পড়ুন Covid Update: দৈনিক সংক্রমণ বাড়লেও স্বস্তি দিচ্ছে সুস্থতার হার
এই রাজনৈতিক ভক্তদের সম্পর্কে আমাদের আনেক দিন আগেই সাবধান করে দিয়েছিলেন বাবা সাহেব আম্বেদকার। শুনুন তিনি কী বলেছিলেন।
কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেমব্লির শেষ দিনে, ১৯৪৯ সালের ২৫ নভেম্বর বাবাসাহেব আম্বেদকার বলেছিলেন, একটা চিন্তা আমার মনে আসছে! ভারতের এই গণতান্ত্রিক সংবিধানের ভবিষ্যৎ কী হবে? দেশ কী পারবে তাকে রক্ষা করতে, না কি সে পেয়েও তাকে হারিয়ে ফেলবে? অতীতেও বার বার দেখা গিয়েছে ভারতের ভিতরের কোনও শক্তির সহায়তায়ই বাইরের শক্তি ভারতের স্বাধীনতা হরণ করেছে। আম্বেদকার বক্তব্যের বিষয় ছিল, তিনি ভয় পাচ্ছেন, ভারতেও এত রকমের রাজনৈতিক সংগঠন আছে যাদের অনেকের বিশ্বাস-ধারণা গণতন্ত্রের ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। এই যে গণতন্ত্রের বিপরীতমুখী বিশ্বাস, সেই বিশ্বাসকে, সেই আদর্শকে তারা কি দেশের আগে, সংবিধানের আগে স্থান দেবে? যদি ভবিষ্যতে কোনও পরিস্থিতিতে দেশের আগে, সংবিধানের আগে তারা তাদের বিশ্বাসকে, আদর্শকে স্থান দেয়, তাহলে তারা একনায়কতন্ত্রকেই রাস্তা করে দেবে। ভারতের সংবিধান হেরে যাবে।
আরও পড়ুন Bengaluru-kempegowda: কেম্পেগৌড়ার মূর্তির জন্য ৪ হাজার কেজির তরোয়াল এল বেঙ্গালুরুতে
জন স্টূয়ার্ট মিলকে উদ্ধৃত করে আম্বেদকার সেদিন বলেছিলেন, কোনও তথাকথিত মহান নেতার পায়ের কাছে যেন কেউ নিজের স্বাধীনতাবোধকে সমর্পণ না-করে। মহান নেতার প্রতি অনুগত হও, কিন্তু সেই আনুগত্যের সীমা যেন থাকে। এরপর আম্বেদকার বলেছিলেন, ভারতে ভক্তি, বীরপূজার একটা সংস্কৃতি আছে। ধর্মে ভক্তি নিয়ে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু রাজনীতিতে ভক্তি, বীরপূজা, একনায়কতন্ত্রকে ডেকে আনে।
আজ বিভিন্ন ঘটনায় হিন্দুত্ববাদী ভক্তকূল যে ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, তাতেই আম্বেদকারের এই ভাষণ মনে করিয়ে দেওয়া দরকার বলে মনে হল।