কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে যে বিজেপি মানতেই চায় না, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়ে গেল গুজরাতের দলিত নেতা, বিধায়ক জিগনেশ মেবানির গ্রেফতারের ঘটনায়। বুধবার প্রায় গভীর রাতে অসমের কোকরাঝাড় পুলিস গুজরাতের পালনপুরের একটি সার্কিট হাউস থেকে গ্রেফতার করে এই দলিত নেতাকে। অভিযোগ, জিগনেশকে এফআইআরের কপি দেখানো হয়নি।কী কারণে তাঁকে গ্রেফতার করতে এসেছে পুলিস, জানানো হয়নি তাও।
অপরাধ কী এই দলিত নেতার? তিনি ১৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে একটি টুইট করেছিলেন। তাতে তিনি লেখেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাথুরাম গডসেকে ভগবান হিসেবে মানেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে গুজরাত সফরের সময় যে সব এলাকায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে, সেই সব জায়গায় গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দিতে বলছি।
এই রকম একটি নির্বিষ টুইটেই নাকি গায়ে ফোস্কা পড়েছে অসমের বিজেপি নেতা অরূপ কুমার দের। বড়োল্যান্ড স্বশাসিত পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য অরূপ পরের দিনই ওই টুইট নিয়ে জিগনেশের বিরুদ্ধে কোকরাঝাড় থানায় অভিযোগ জানান। তাঁর অভিযোগ, ওই বিধায়কের এ হেন মন্তব্য নাকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিপন্থী এবং তা সমাজের ক্ষতি করতে পারে। তাই তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
বিজেপি নেতার অভিযোগ বলে কথা। অমনি নড়েচড়ে বসল অসম পুলিস। বিমানে চাপিয়ে তারা সুদূর গুজরাত থেকে ধরে আনল বদগামের বিধায়ক জিগনেশকে। কোকরাঝাড় আদালত তাঁকে তিনদিন পুলিস হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
কে এই জিগনেশ? কেন তাঁকে নিয়ে এত ভয় বিজেপির?
এই লড়াকু যুবক গুজরাতের দলিত আন্দোলনের একটি পরিচিত মুখ। তিনি রাষ্ট্রীয় দলিত অধিকার মঞ্চের নেতা। গুজরাতে গত বিধানসভা ভোটের সময় তিনি এবং হার্দিক প্যাটেল বিজেপির কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছিলেন। সেবার গুজরাতে প্রায় কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় বিজেপি। কংগ্রেস ভাল ফল করে। কংগ্রেসের এই ভালো ফলের পিছনে এই দুই তরতাজা যুবকের অবদান যথেষ্ট ছিল। হার্দিক সরাসরি কংগ্রেসে যোগ দেন। আর কংগ্রেসে যোগ না দিলেও জিগনেশ তাদের সমর্থন করেন এবং বদগামে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেও যান। তাঁর সঙ্গে এখনও কংগ্রেসের সম্পর্ক খুব ভালো। তাঁর গ্রেফতারির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: Jahangirpuri-TMC: জাহাঙ্গিরপুরীতে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল, আর্তদের সঙ্গে কথা বলতে দিল না পুলিস
কংগ্রেসের অভিযোগ, যে তৎপরতার সঙ্গে অসম পুলিস জিগনেশকে গ্রেফতার করল, তাতেই স্পষ্ট যে, ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত। কংগ্রেসের আরও অভিযোগ, সামনে গুজরাত বিধানসভার ভোট। এখন থেকেই বিজেপি কংগ্রেসকে ভয় পাচ্ছে। তাদের সঙ্গে জিগনেশের বোঝাপড়ায় শঙ্কিত বিজেপি। তাই এক মামুলি অভিযোগে রাতারাতি গ্রেফতার করা হল তাঁকে।
কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালার প্রতিক্রিয়া, স্বৈরাচারী শাহেনশাহ আতঙ্কিত। তাই এই গ্রেফতারি।
আসলে সত্যিই বিজেপি এক স্বৈরাচারী শাসক। তা না হলে এই রকম একটা নির্বিষ টুইটের জন্য একজন দলিত বিধায়ককে রাতের অন্ধকারে গ্রেফতার করতে হবে? তারা যে কোনও রকম বিরোধী মতকে দমিয়ে রাখতে চায়, এই ঘটনায় সেটাই বোঝা গেল। এই প্রসঙ্গেই মনে পড়ছে ভীমা কোরেগাঁও মামলার কথা। বিশিষ্ট দক্ষিণী কবি এবং বিপ্লবী ভারভারা রাও আজও রাষ্ট্রযন্ত্রের শিকার হয়ে জেলে পচছেন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ এবং বয়সের ভারে ন্যুব্জ। বারবার তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যাচ্ছে। ওই মামলায় আরও অনেক বুদ্ধিজীবীকে ফাঁসানো হয়েছে। কয়েকজনের জামিন হয়েছে। বাকিরা এখনও জেল খাটছেন। তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ, তাঁরা নাকি দলিতদের খেপিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে খুনের ষড়যন্ত্র করেছেন।
মোদ্দা কথা হল, এই বিজেপি সরকার মত প্রকাশের অধিকারকে স্তব্ধ করে দিতে চায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মন কি বাত অনুষ্ঠানে শুধু নিজের কথা বলে যাবেন। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না। কোনও সাংবাদিক বৈঠক করবেন না। আর রাষ্ট্রীয় শাসনযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে মত প্রকাশের অধিকারকে কেড়ে নেবেন।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইটে যথার্থ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, মোদিজি, আপনি রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভিন্নমত দমন করতে পারেন। কিন্তু সত্যকে আটকে রাখতে পারবেন না।
কীসের এত ভয় বিজেপির? এ ভাবে মত প্রকাশের অধিকারকে কতদিন আটকে রাখা যাবে? জরুরি অবস্থা জারি করার পরে ইন্দিরা গান্ধীর পরিণতির কথা কি ভুলে গিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? সত্যিকে চিরকাল আটকে রাখা যায় না। এটা মনে রাখবেন।