কলকাতা: স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় (School Service Commission) কড়া পদক্ষেপ কলকাতা হাইকোর্টের। এসএসসি উপদেষ্টা শান্তি প্রসাদ সিনহাকে বৃহস্পতিবারই জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই। রাত ১২টার মধ্যে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে এখনই তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না বলেও জানিয়েছেন বিচারপতি। এই মামলার পরবর্তী শুনানি শুক্রবার।
বিচারপতির রায়ে বলা হয়েছে, বেআইনি নিয়োগের ক্ষেত্রে একটা বড় চক্র কাজ করছে। সেই চক্র ভাঙার জন্য বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজন। বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ থেকে আমি নিশ্চিত, শান্তি প্রসাদ সিনহা এই চক্রের এক অন্যতম পান্ডা। তাই তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই (CBI)। এবং সেটা আজই।
২০১৬ সালের গ্রুপ ডি (SSC Group-D) রিজিওনাল লেভেল সিলেকশন টেস্টে ৯৮ জন কর্মী নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের হয় (Calcutta High Court) কলকাতা হাইকোর্টে। স্কুল সার্ভিস কমিশন রিপোর্ট দিয়ে জানায়, তারা নিয়োগের সুপারিশ করেনি। অপরদিকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানায়, কমিশনের সুপারিশ পেয়েই নিয়োগপত্র পাঠানো হয়েছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য ২০২০ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন শান্তি প্রসাদ সিনহা। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ ওই কমিটির ভূমিকা নিয়েই বিভিন্ন সময়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। কমিশনের নিয়োগের ক্ষেত্রে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাতে ওই কমিটিরও হাত রয়েছে বলে আদালত মনে করেছে। আদালত এদিন আরও জানায়, এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত বহু ক্ষেত্রে প্রাক্তন উপদেষ্টা এস পি সিনহার নির্দেশেই অনিয়ম হয়েছে, এমন তথ্য রয়েছে আদালতের কাছে। সেই ব্যাপারেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআইকে নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
এর আগে ওই উপদেষ্টাকে আদালতেও তলব করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক মামলায় তিনি সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন কিছুদিন আগে। কিন্তু সবক্ষেত্রেই বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেয়। সম্প্রতি শান্তি প্রসাদের স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তির হিসেব ৩১ মার্চের মধ্যে পেশের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ডিভিশন বেঞ্চ ওই সময়সীমা পাঁচদিন বাড়িয়ে দেয়। এসব কারণে ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কেন এভাবে বারবার তাঁর নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চেয়ে বুধবারই তিনি কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁর অভিযোগ, ডিভিশন বেঞ্চ তাঁকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না। তিনি বলেন, চাকরির নিয়োগে যে দুর্নীতি হচ্ছে, দেশ তা দেখুক। বিচার করুক, বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়া নিয়ে কী হচ্ছে। তারপরই বৃহস্পতিবার ফের সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ।