রামপুরহাট: ধীরে ধীরে সন্ধে নামছে। ভাদু শেখের (Bhadu Sheikh) বাড়িতে পাড়া-প্রতিবেশীর ভিড়। সেই বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ইঞ্জিনভ্যান। এলাকারই কয়েকজন যুবক সেই ভ্যানে ট্রাঙ্ক, বাসন, চেয়ার, জামা-কাপড় সহ প্রতিদিনের ব্যবহারের জিনিস বোঝাই করছেন। ব্যাপারটা কী? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গ্রামে থাকার সাহস হচ্ছে না নিহত ভাদু শেখের পরিবারের। কিছুটা ‘শান্তি’র খোঁজে (Rampurhat Violence) তাই বাক্স-প্যাটরা গুছিয়ে গ্রাম ছাড়ছেন ভাদু শেখের পরিবার। কোথায় যাবেন? ভাদুর বাবা-দাদা স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারলেন না। তাঁরা জানালেন, রামপুরহাট শহরেই থানার কাছে কোথাও আস্তানা গাঁড়বেন তাঁরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গ্রামে ফেরার কথা ভাববেন।
২৪ ঘণ্টা আগেও অবশ্য ভাদুর পরিবার ভাবতে পারেনি, আগামী কয়েক ঘণ্টায় তাদের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাবে। সোমবার সন্ধেয় রামপুরহাট ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু খুন হওয়ার পরই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে বগটুই গ্রাম। সেই গ্রামের পশ্চিমপাড়ার একাধিক বাড়িতে আগুন লাগানো হয় বলে অভিযোগ। আঁচ গিয়ে পড়ে পূর্বপাড়াতেও। সকাল থেকেই গ্রাম ছাড়তে শুরু করেন অনেকে। পুলিসি ধড়পাকড়ের ভয়ে গ্রামের পুরুষরা একপ্রকার বাধ্য হয়েই পালিয়ে যান। গ্রামের অনেক বাড়িতেই তালা পড়ে গিয়েছে। ঘটনার পর প্রায় একদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিস আসল দুষ্কৃতীদের ধরতে পারেনি বলে দাবি ভাদুর পরিবারের। তার পরই ভাদু শেখের গ্রাম ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ভাদু শেখের দেহ কবরে শায়িত করার পর গ্রাম ছাড়ার প্রস্তুতি শুরু করে পরিবার। সন্ধে ৭টা নাগাদ বাড়ির সমস্ত আসবাবপত্র ইঞ্জিনভ্যানে চাপিয়ে নিয়ে গ্রাম ছাড়ে ভাদুর পরিবার। পরিবারের ১৬ জন সদস্য গ্রাম ছাড়েন। ভাদুর পরিবারের বক্তব্য, নিরাপত্তার অভাব বোধ করার কারণেই গ্রাম ছাড়লেন তারা। ভাদুর বাবা বলেন, আমার ছেলে গ্রামের মাথা ছিল। তাঁকেই খুন করা হল। কোন ভরসায় গ্রামে থাকব? যেখানে গেলে একটু সুখ পাব, সেখানেই যাচ্ছি। ভাদুর দাদা নুর আলি বলেন, দু’বছরে দুই ভাইকে হারালাম। পুলিস আসল দোষীদের না ধরে আমাদেরই ১৫-১৬ জনকে ধরল। এই পরিস্থিতিতে গ্রামে থাকার ভরসা পেলাম না। রামপুরহাট থানার আশপাশে কোথাও থাকবেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee Rampurhat Violence: রামপুরহাট কাণ্ডে রাজ্যপালের টুইটের পালটা জবাবে কড়া চিঠি মমতার