রামপুরহাট: তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বেই কি রামপুরহাট (Rampurhat Violence) অগ্নিগর্ভ? অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা অবশ্য জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব (TMC) স্বীকার করছে না। জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের ঘটনাকে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ বলে মানতে চাননি। শাসকদলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও (Kunal Ghosh) বলেন সিট গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পরই আসল কারণ জানা যাবে। এমনকী বীরভূম জেলা পুলিস সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীও এই মুহূর্তে বলতে পারছেন না ঠিক কী থেকে কী হয়েছে। সম্ভাব্য সবদিক খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ফরেনসিক রিপোর্টের অপেক্ষা করছেন জেলা পুলিসকর্তা। কিন্তু, স্থানীয় একাধিক সূত্রে দাবি করা হয়েছে, তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখ (Rampurhat TMC Leader Murder) খুনের জেরেই এলাকার একদল উত্তেজিত মানুষ বগটুই গ্রামে একের পর গ্রামে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। বোমাবাজির ঘটনাও ঘটেছে।
মঙ্গলবার সকালে বগটুই গ্রামের একটি বাড়ি থেকেই সাত জনের দগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃতরা সোনা শেখের পরিবারের। এই সোনা শেখও ওরফে সঞ্জু অরফ তৃণমূল (Rampurhat political violence) করতেন। এমনকী তিনি উপপ্রধান ভাদু শেখের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেও কেউ কেউ দাবি করেছেন। স্বভাবতই যে প্রশ্নটা সামনে আসছে, তিনি যদি ভাদু শেখের ঘনিষ্ঠই হবেন, তা হলে উপপ্রধান খুনের জেরে কেন তাঁর বাড়িতে আগুন লাগানো হবে?
সোমবার ভরসন্ধ্যায় বোমা মেরে খুন করা হয় রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখকে। এলাকায় জনপ্রিয় ছিলেন ভাদু শেখ। ঘটনার পর থেকেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে বগটুই গ্রামে। যার জেরে মাঝরাতে বেশ কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন ধরানোর অভিযোগ (Rampurhat Fire Deaths) ওঠে। তার মধ্যে সোনা শেখের বাড়িও রয়েছে। অভিযোগ, অগ্নিসংযোগের আগে সোনা শেখের বাড়ির দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যে কারণে পরিবারের কেউ বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেননি।
আরও পড়ুন: Rampurhat Clash: রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে যাচ্ছে সিআইডি
1/3: রামপুরহাটে আগুনে মৃত্যু।
দুঃখের। অবাঞ্ছিত।
কিন্তু এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। স্থানীয় গ্রাম্য বিবাদ।
এর আগের দিন তৃণমূল উপপ্রধানকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়।
তিনি জনপ্রিয় ছিলেন।
গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল।
রাতে আগুনের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, দমকল ব্যবস্থা নিয়েছে।
More— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) March 22, 2022
স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের খবর অনুযায়ী, সোনা শেখ নিহত ভাদু শেখের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করা হলেও আদতে দু’জনের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব (Political Violence) ছিল। একসময় কংগ্রেস করতেন সোনা শেখ। ২০১১-য় রাজনৈতিক পালাবদলের সময় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। সোনা শেখের পরিবার বিত্তশালী হওয়ায় গ্রামে তাঁর প্রতিপত্তিও ছিল। কিন্তু, রাজনৈতিক শিবির বদল করলেও দলে কাঙ্ক্ষিত গুরুত্ব পাননি। ভাদু শেখের জনপ্রিয়তার কারণেই সুবিধে করে উঠতে পারেননি। তা থেকেই অন্তর্দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। কিন্তু, জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব বাগটুই গ্রামের ঘটনার নেপথ্যে এরকম কোনও রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে বলে মানতে চাননি।
রামপুরহাটের হিংসার ঘটনায় কত জনের মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। জেলা পুলিস সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী দাবি করেন ৭ জন মারা গিয়েছেন। কিন্তু দমকলের এক আধিকারিক দাবি করেন, মঙ্গলবার সকালেই তাঁরা ৭টি দগ্ধ দেহ উদ্ধার করেছেন। সোমবার গভীর রাতে আরও ৩টি দেহ উদ্ধার হয়। সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ১০। গোটা ঘটনায় ১৫ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।