নয়ডা: মধ্যরাতের নিরিবিলি নয়ডার রাস্তায় ছেলেটা ছুটছে! একা এবং একা। পরনে কালো ফুল স্লিভ টি-শার্ট। ম্যাচ করে কালো শর্টস। পায়ে স্নিকার্স। পিঠে একটা ব্যাগ। ভ্রুক্ষেপহীন সেই ছুটে চলা…।
চলচ্চিত্রকার বিনোদ কাপরির পোস্ট করা ভিডিয়োটি দেখে ‘রোলা’কে মনে পড়লেও পড়তে পারে। যদিও জার্মান চিত্র পরিচালক টম টাইকওয়ারের থ্রিলার ছবি ‘রান রোলা রান’-এর সেই রোলা-র সঙ্গে বিনোদের লেন্সবন্দি করা বছর উনিশের ছেলেটির কোনও মিল নেই। বয়ফ্রেন্ডের জীবন বাঁচাতে রোলা হাতে পেয়েছিল মাত্র ২০ মিনিট। তার মধ্যে মোটা অঙ্কের অর্থ তাকে জোগাড় করতে হবে। বাস্তবিকই রাজপথে টম টাইকওয়ারের সেই তরুণীর দৌড় ছিল রুদ্ধশ্বাস। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য। কিন্তু, নয়ডার এই তরুণ সেলুলয়েডের কোনও চরিত্র নয়। তাঁর দৌড়ও ঊর্ধ্বশ্বাস নয়। তবু, তাঁকে দৌড়তে হয়।
ছেলেটি কেন দৌড়য়? ক্রমশপ্রকাশ্য। বিনোদই ভেঙেছেন ভিডিয়োয়। কথোপকথনে। বাজি ধরে বলা যায়, রান রোলা রান-এর থেকে কম আকর্ষণীয় নয় প্রদীপ মেহরার এই লড়াই। আর তা নয় বলেই, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়ার পরেই ভাইরাল। ২৪ ঘণ্টা পেরনোর আগেই ৭০ লক্ষ ভিউ! ভিডিয়োর ওই তরুণকে অনেকই সাহায্য করতে চেয়েছেন।
নয়ডার রাস্তায় চলার পথে অকস্মাৎই দেখা হয়েছিল তাঁদের। মধ্যরাতে এক তরুণকে পিঠে ব্যাগ নিয়ে ছুটতে দেখে বিস্মিত হন পরিচালক বিনোদ। গাড়ি নিয়ে তিনি একই দিকে যাচ্ছিলেন। কৌতূহল থেকে নিজেই আগ বাড়িয়ে কথা বলেন।
নয়ডার সেক্টর-১৬ থেকে তাঁর বারালার বাড়ি, প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ। দৌড়ে দৌড়ে এ ভাবে বাড়ি ফিরছেন শুনে নেহাত সৌজন্যের খাতিরেই লিফট দিতে চান বিনোদ কাপরি। নির্দ্বিধায় সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে প্রদীপ যে জবাব দেন, তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না বিনোদ।
তাঁদের কথোপকথন থেকেই সামনে আসে, কোনও একদিনের ঘটনা নয়। নয়ডা শহরের ম্যাকডোনাল্ড আউটলেটে নাইটশিফট শেষ করে রোজ এ ভাবেই মধ্যরাতে ১০ কিলোমিটার পথ দৌড়ে বাড়ি ফেরেন প্রদীপ। অনেকের মধ্যেই অনেকরকম পাগলামি থাকে। দিন-আনা-দিন-খাওয়া সংসারে গাড়িভাড়া বাঁচাতে কেউ হাঁটেন। কিন্তু, প্রদীপ হাঁটেন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন এই তরুণ।
আরও পড়ুন-Mamata Maa: জেনারেটর বন্ধ করে বিধায়ক, মমতাকে ‘মা’ সম্বোধন পুলিস সংগঠনের আহ্বায়কের, ভাইরাল ভিডিয়ো
স্বভাবতই বিনোদের মনে প্রশ্ন জাগে, ভোরেও তো দৌড়নো যায়। তা হলে, মধ্যরাতে দৌড়নো কেন? তরুণটি জানান, দিনে তাঁর সময় নেই। বাড়িতে দু-বেলা রান্না করতে হয়। তাই সেনার চাকরির জন্য নিজেকে তৈরি করতে মধ্যরাতকে বেছে নিয়েছেন। তাঁর রোজের এই অনুশীলনে ব্যাঘাত ঘটবে বলেই গাড়িতে উঠতে রাজি নন।
বাড়িতে রান্না করতে হয়! আরও একবার ধাক্কা খেয়েছিলেন বিনোদ। কথায় কথায় জানতে পারেন, ছেলেটির বাড়ি উত্তরাখণ্ডে হলেও জীবিকার সূত্রে দাদার সঙ্গে তাঁকে নয়ডায় থাকতে হয়। উত্তরাখণ্ডের বাড়িতে বাবা-মা আছেন। মা অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি। মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর উদ্বেগ থাকাটাও স্বভাবিক। বাকিটা দেখুন ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয়।
https://twitter.com/vinodkapri/status/1505535421589377025?s=20&t=q_oI_9meiUaD1QOF4h2OnA
"The world bows before hard work"
A video of 19-year-old Pradeep Mehra, an Indian army aspirant who runs around 10km to his home every night after work, has touched a chord with thousands on social media.https://t.co/nvNUt9bJOF
— BBC News India (@BBCIndia) March 21, 2022
সেনায় চাকরি পাওয়ার জন্য উত্তরাখণ্ডের এই তরুণের এহেন নিষ্ঠা দেখে কুর্নিশ না জানিয়ে পারেননি নেটিজেনরা।