নয়াদিল্লি: যুদ্ধ-ধ্বস্ত ইউক্রেন ছেড়ে পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হন ভারতীয় পড়ুয়া হরজ্যোত সিং৷ এক সপ্তাহ হতে চলল কিভ সিটি হাসপাতালে ভর্তি তিনি৷ কিন্তু এতদিন হরজ্যোতের ব্যাপারে অন্ধকারেই ছিল ভারত সরকার৷ শুক্রবার রাতের পর বিষয়টি জানাজানি হতেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করে নয়াদিল্লি৷ জানিয়ে দেয়, জখম হরজ্যোত সিংয়ের চিকিৎসার খরচ বহন করবে সরকার৷ শুক্রবার বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এ কথা জানান৷ তিনি বলেন, জখম পড়ুয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে খোঁজ খবর শুরু হয়েছে৷ ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাস খোঁজ নেওয়া শুরু করেছে৷ কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে তাঁর কাছে পৌঁছতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র৷
এই জন্য ভারত চাইছে দুই দেশই স্থানীয়ভাবে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করুক৷ যাতে যুদ্ধবিরতির মধ্যে ওই এলাকায় বিপদে পড়া ভারতীয়দের বের করে নিয়ে আসা সম্ভব হয়৷ বিদেশমন্ত্রক মেনে নিয়েছে, এছাড়া তাঁদের কাছে পৌঁছনো খুবই কঠিন৷ অরিন্দম বাগচি জানিয়েছেন, পাঁচটি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ ওই সব বাসে খারকিভ এবং পিসোচিনে আটকে পড়াদের বের করে নিয়ে আসা হবে৷ পিসোচনে এই মুহূর্তে ৯০০-১০০০ পড়ুয়া রয়েছেন৷ সুমি এলাকায় রয়েছেন ৭০০ পড়ুয়া৷ কিন্তু মাত্র পাঁচটি বাসে এত জনকে একসঙ্গে বের করে আনা যে সম্ভব নয় তা বিলক্ষণ জানে ভারত৷ তাই ইউক্রেন সরকারের কাছে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করার আবেদন জানিয়েছিল বিদেশমন্ত্রক৷ কিন্তু ইউক্রেনের তরফে কোনও জবাব আসেনি৷
গত সপ্তাহে মাঝামাঝি ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরু করে রাশিয়া৷ তারপরই সে দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায় ভারতীয় পড়ুয়াদের মধ্যে৷ কিন্তু বোমা-শেলিংয়ের মধ্যে অনেকেই বাঙ্কার বা নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেন৷ গত মঙ্গলবার নিরাপদ জায়গা থেকে বেরিয়ে খাবার কিনতে বেরিয়ে রুশ শেলিংয়ে মৃত্যু হয় এক ভারতীয় পড়ুয়ার৷ ওই ঘটনার তিনদিন পর হরজ্যোত সিংয়ের খবর জানাজানি হয়৷ অন্যান্যদের মতো হরজ্যোতিও পালাতে কিভ স্টেশনে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু তাঁকে ট্রেনে উঠতে না দেওয়ায় একটি ক্যাব বুক করেন বন্ধুদের সঙ্গে লিভিভ যাবেন বলে৷ সেই ক্যাব লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে বন্দুকধারীরা৷ একটি বুলেট লাগে হরজ্যোত-এর কাঁধে৷ একটি তাঁর বুকে ও হাঁটুতে৷ হরজ্যোতের পায়ে ফ্র্যাকচারও হয়৷ ওই অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় পড়ে ছিলেন তিনি৷ সাহায্যের জন্য কাউকে পাননি৷ পরে একটি অ্যাম্বুল্যান্স এসে হরজ্যোতকে কিভ হাসপাতালে নিয়ে যায়৷
আরও পড়ুন: Operation Ganga: বুকারেস্টে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফেরাতে বিদেশমন্ত্রকের নয়া হটলাইন নম্বর
সংবাদমাধ্যমকে হরজ্যোত জানিয়েছেন, গত রবিবার রাতে তিনি গুলিবিদ্ধ হন৷ ওই দিন থেকে তিনি হাসপাতালে৷ যেখানে তিনি জখম হয়েছিলেন সেখান থেকে ২০ মিনিট দূরে ভারতীয় দূতাবাস৷ হাসপাতালে ভর্তির পর হরজ্যোত ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন৷ ততদিনে কিভ থেকে দূতাবাস সরিয়ে লিভিভে নিয়ে যাওয়া হয়৷ দূতাবাসের কর্মীদের হরজ্যোত এটাও বলেছিলেন, তিনি কিভ ছেড়ে বেরতে চান৷ শুধু তাঁকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাটুকু করে দেওয়া হোক৷ কিন্তু অভিযোগ, দূতাবাসের তরফে কোনও সাহায্য তিনি পাননি৷ দিল্লির বাসিন্দা হরজ্যোত জানিয়েছেন, তাঁর মতো আরও অনেক পড়ুয়া কিভে আটকে৷ তড়িঘড়ি দূতাবাস লিভিভে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন হরজ্যোত৷ বলেন, দূতাবাসের উচিত ওখানে থেকে ছাত্রদের আগে সাহায্য করা৷ কিন্তু পড়ুয়াদের আগেই কিভ ছাড়েন দূতাবাসের কর্মীরা৷