কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: যুদ্ধ শুরু। কিন্তু কেন এই যুদ্ধ (What’s Behind The Russia-Ukraine Crisis)? জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে রাশিয়ার ইউক্রেনের আক্রমণের মধ্য দিয়েই কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের (Third world war) অশনি সংকেত দেখা দিচ্ছে! এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।
রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের বিবাদ আজকের না। সোভিয়েতের পতনের পর থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন-সহ (Russia-Ukraine) আরও বেশ কয়েকটি ছোট দেশের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। ঠান্ডাযুদ্ধের সময় এই কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে আধিপত্য ছিল সোভিয়েতের ( Soviet Union)। সেই সোভিয়েতের ভাঙনে এই সমস্ত ছোট দেশগুলি রাশিয়ার থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং ক্রমশ পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় হতে শুরু করে।
বিবাদের মাত্রা বাড়তে শুরু করে ২০১৪ সালে। ইউক্রেন সীমান্ত এলাকায় রুশ সেনা অভিযান ঠান্ডাযুদ্ধের পর ফের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংকটকে বাড়িয়ে দেয়। ইউক্রেনের বন্দর ক্রিমিয়া দখল করে রুশ বাহিনী। সেই থেকে আজ পর্যন্ত দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকে। শেষ পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে, ইউক্রেন সীমান্ত জুড়ে রাশিয়া প্রায় ১ লক্ষ সেনা মোতায়েন করেছে।
রাশিয়ার আপত্তির কারণ ছিল সাবেক সোভিয়েতের ইউক্রেন-সহ অন্যান্য দেশকে নেটোর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পূর্ব ইউরোপ থেকে নেটো (North Atlantic Treaty Organization) বাহিনী প্রত্যাখ্যান করা অর্থাৎ পোল্যান্ড এবং বালটিক রাষ্ট্রগুলি থেকে বাহিনী সরিয়ে নেওয়া। অর্থাৎ রাশিয়ার দাবি ছিল, ’৯৭ পূর্ববর্তী সীমান্ত প্রদেশ তাদের ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু আমেরিকা-সহ ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ান এর বিরোধিতা করে।
আরও পড়ুন- Russia-Ukraine War: ইউক্রেনের আকাশে আগুনের ঝলক, মুহুর্মুহু বাজছে সাইরেন, আতঙ্কে দিশাহারা মানুষ
দ্বিতীয়ত, সোভিয়েত পতনের সময় ইউক্রেনে প্রায় পাঁচ লক্ষ রুশ নাগরিক বসবাস করতেন। গত দশ বছর ধরে মস্কো (Moscow) তাদের রাশিয়ান পাসপোর্ট দিয়ে চলেছে। সর্বশেষ জনগনণা অনুযায়ী, ইউক্রেনে বাস করেন প্রায় ৮০ লক্ষ রুশ। দেশের দক্ষিণ ও পূর্ব দিকেই মূলত রুশ নাগরিকদের বসবাস। এই রুশ নাগরিকদের পৃথক হতে চাওয়ার দাবি নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের (Russian President Vladimir Putin) সঙ্গে গণ্ডগোল চরমে ওঠে। রাশিয়া রুশ বাসিদের এই দাবিকে সমর্থন জানায়। ইউক্রেনের দক্ষিণপূর্ব এলাকাতে নভোরশিয়া বা নতুন রাশিয়া বলে ঘোষণা করতেও পিছপা হয় না। যদিও পুতিনের এই আগ্রাসী বিদেশনীতি দেশের অভ্যন্তরে জনপ্রিয় হয়।
ইউরোপীয় দেশগুলিতে ৪৩ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস সরাবরাহ হয় এই এলাকা থেকে। যার এক তৃতীয়াংশ গ্যাস যায় ইউক্রেন হয়ে। যে কারণে এই যুদ্ধের ঘটনায় ইউরোপীয় দেশগুলিও উদ্বেগে রয়েছে। অতীতে রাশিয়া এই গ্যাসের পাইপলাইন বন্ধ করে দিয়েছিল বিবাদ চলাকালীন। ফলে, এবারে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা। আমেরিকা(the United States and the European Union), কানাডা(Canada), ফ্রান্স(France), জার্মানি(Germany), ব্রিটেন(the United Kingdom), ইতালি(Italy), জাপান(Japan)-সহ সমগ্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে এককাট্টা হওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে। এই সব কটি দেশই তিন বাহিনীতেই পরমাণু অস্ত্র শক্তিধর। সেই কারণেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।