ভাবছেন ভ্যালেন্টাইনস ডে-র লুক কি করে স্পেশাল করা যায়? উপায় একটা আছে, পার্লারে বা সালোঁতে যেতে হবে না বরং ঘরে বসেই লাবণ্য ও জৌলুস ফুটিয়ে তুলুন ত্বকে। আয়ুর্বেদের ত্বক পরিচর্যার এই পদ্ধতিকে কাজে লাগান। ধাপে ধাপে জেনে নিন কীভাবে নিতে হবে ত্বকের যত্ন।
স্নানের আগে অন্তত মিনিট দুয়েক ত্বকে ড্রাই ব্রাশ করুন। তবে এই ড্রাই ব্রাশের জন্য ব্রাশ দেখে কিনুন। নরম ব্রিসেলের ব্রাশ বাছুন যাতে ত্বকের ক্ষতি না হয়। এই ড্রাই ব্রাশের ফলে লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম বা লসিকানালী উদ্দীপিত হওয়ায় ডিটক্সিফিকেশনের কাজ ভাল হয়। পাশাপাশি রক্ত সঞ্চচালনও বেড়ে যায়। আরও ভাল হয় যদি গাতে তেল মাখারা আগে যদি এই ড্রাই স্ক্রাব করা যায়। এর জন্য নরম ব্রাশ কিংবা খসের তৈরি ছোবরা দিয়ে গা ঘষতে পারেন। এতে ত্বকের মৃত কোষ সহজে সরিয়ে ফেলা যাবে।
ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছাতে ও আর্দ্রতা বজায় রাখতে আয়ুর্বেদের অভয়াঙ্গা পদ্ধতি ভীষণ কাজের। এই পদ্ধতিতে হালকা গরম আয়ুর্বেদিক তেল দিয়ে ত্বক মালিশ করা হয়। এরপর ৩০ থেকে ৪৫মিনিট অপেক্ষা করে, যাতে ত্বকের ওপরের স্তর থেকে ত্বকের ভীতরের স্তরগুলিতে তেল পৌঁছায়। অপেক্ষার পর স্নান সেরে নিন।
এই পদ্ধতির জন্য কোল্ড-প্রেস্ড তিলের তেল ব্যবহার করতে পারেন।
সাধারণত এই অভয়াঙ্গা তেল তৈরিতে বেস হিসেবে ব্যবহার করা হয় আমন্ড অয়েল ও অলিভ অয়েল তাতে খস ও চন্দনের তেল যোগ করতে হবে। এই তেল ব্যবহারের পর দেখবেন আপনার দেহ ও চেহারায় তারুণ্য ফুটে উঠেছে। ত্বকের আর্দ্রতা ও পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি সুগন্ধির কাজও করবে।
আয়ুর্বেদে উবটানের ব্যবহার খুবই প্রচলিত। এই প্রাকৃতিক হার্বাল স্ক্রাব শুধুমাত্র ত্বকের ওপরের স্তরে জমে থাকা মৃত কোষ, ময়লা ও অন্যান্য পদার্থ সরিয়ে ত্বকে পরিষ্কার করে। পাশাপাশি ত্বকের আর্দ্রতাও নষ্ট হতে দেয় না। বাড়িতে এভাবে বানিয়ে ফেলুন উবটান- একটি পাত্রে বেসন, গোলাপ পাতার গুঁড়ো, লেবুর খোসার গুঁড়ো, খস ও সারিভা ভাল করে মিশিয়ে নিন। এবার তেল মাখা গায়ে ভাল করে ডলে নিন যাতে বাড়তি তেল মুছে ফেলা যায়।
বালতিতে জল নিয়ে কিংবা বাথটবে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। ল্যাভেন্ডার অয়েল, লেমনগ্রাস অয়েল, স্যান্ডালউড অয়েল কিংবা সুইট বেসিলের মতো এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এতে শুধু যে ত্বকই ভালু থাকবে তা নয় বরং ভ্যালেন্টাইন ডে-র দিনে মুডও ভাল থাকবে।
শুধু ভ্যালেন্টাইনস ডে বলেই নয় শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত ২ থেকে ৩ লিটার জল খান। এতে ত্বক ভাল থাকবে, আর্দ্রতা বজায় থাকবে এবং জৌলুসও বজায় থাকবে। জলের পাশাপাশি সকালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পরিপূর্ণ ফলের রস যেমন খরবুজ ও আঁখের রস খেতে পারেন। পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেন যু্ক্ত পানীয় ও ঠান্ডা জল না খাওয়াই ভাল।
টাটকা ফল ও শাক সবজিতে প্রচুর পরিমান পুষ্টি থাকে। এক্ষেত্রে ব্রোকোলি, শশা, শাক পাতা যেমন পালং শাক, ধনে পাতা, বীজ, বাদাম ও আপেল, তরমুজ ইত্যাদি খেতে পারেন। তবে শুধু একদিন না ভাল ফল পেতে নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে এই সব খাবার। অতিরিক্ত চিনি, জাঙ্ক খাবার, বেশি পরিমানে নুন ও তেল মশলাযুক্ত খাবার, তেল চপচপে ও প্রসেস্ড খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
শুধু শরীর না ত্বক ভাল রাখতেও ঘুমের যথেষ্ট ভুমিকা রয়েছে। ঘুমের মধ্যে ত্বক নিজের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি সারিয়ে তোলে এবং মৃত কোষগুলি পরিষ্কার করে ফেলে। তাই ত্বক ভাল রাখতে ত্বক অনন্ত সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমোন। ভাল ঘুম হলে সকালে উঠে দেখবেন মুখে সুন্দর একটা আভা ফুটে উঠেছে। আর চোখের ক্লান্তি যেন মুখের এই সৌন্দর্য্য ম্লান না করে তার জন্য ঘুমোতে যাওয়ার সময় মোবাইল ব্যবহার করবেন না চোখে চাপ পড়বে।
(ছবি সৌ: Unsplash)