Placeholder canvas
কলকাতা শনিবার, ০৪ মে ২০২৪ |
K:T:V Clock

Placeholder canvas
চতুর্থ স্তম্ভ : মন্ডল বনাম কমন্ডল (২য় ভাগ)
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  • | Edited By:
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২২, ১১:৫০:৫৮ পিএম
  • / ৩১৩ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • • | Edited By:

গতকাল বলেছিলাম, রামমন্দিরের হাওয়া, বিজেপির হিন্দুত্ববাদ সাময়িকভাবে হলেও রুখে দিয়েছিলেন ভিপি সিং৷ অস্ত্র ছিল মন্ডল কমিশনের রায়৷ ওবিসি রিজার্ভেশন, দলিত, পিছড়ে, অতি পিছড়ে বর্গের মানুষজন দাঁড়িয়ে গেল আপার কাস্ট হিন্দুদের বিরুদ্ধে৷ সোশ্যাল জাস্টিসের স্লোগান উঠল হিন্দুত্ববাদের বিপরীতে। জন্ম হল একগুচ্ছ নেতার৷ লালু, মুলায়ম, নীতীশ কুমার৷ কিছুদিনের মধ্যেই কাঁশিরাম চলে এলেন সেন্টার স্টেজে, দেশের সেই দরিদ্র মানুষেরা, যারা দলিত, হরিজন, ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসের মধ্যে পড়েন, তাঁরা এইসব নেতাদের মধ্যেই তাদের মসিহা খুঁজে পেলেন। বিজেপির লাভ হল, ক্ষতিও হল। কীভাবে? ক্ষতি হল কারণ তাদের হিন্দু মনোলিথিক, হিন্দু ঐক্যবদ্ধ সমাজ চুরমার হয়ে গেল৷ ব্যাকওয়ার্ড, আদার ব্যাকওয়ার্ড, দলিত ভোটব্যাঙ্ক তাদের হাত থেকে চলে গেল৷ অন্যদিকে লাভও হল, কারণ দেশের রাজনীতিতে তাদের দুই প্রধান প্রতিপক্ষ, কংগ্রেস আর কমিউনিস্টরা দুর্বল হয়ে গেল৷ কংগ্রেসের কাছ থেকে দলিত ভোট চলে গেল৷ কমিউনিস্টরা তো হ্যাভ আর হ্যাভ নটসের সরলীকরণে ভুগছিলেন৷ চোখের সামনে দেখলেন, সে সব ভোট চলে গেছে লালু যাদব, মুলায়মদের দিকে। লালু যাদবের দয়ায় কটা এমএলএ হলে হবে, নাহলে শূণ্য।

কিন্তু তাদের এই পিছিয়ে পড়া বিজেপির কাছে ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁরা স্ট্রাটেজি পাল্টালেন৷ বনিয়া আর ঠাকুর, ব্রাহ্মণ নয়, তাদের নজর পড়ল ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসের দিকে। মূলত সেই সময় থেকেই বিজেপিতেও কিছু ব্যাকওয়ার্ড নেতা উঠে আসতে লাগল৷ বিজেপি বলতে থাকল ইনক্লুসিভ পলিটিক্স৷ হিন্দু সমাজের প্রত্যেক ভাগ, শ্রেণি, জাতিকে নিয়ে রাজনীতি করার কথা। উত্তর প্রদেশে পেয়ে গেলেন কল্যাণ সিংকে, পিছিয়ে পড়া লোধ সম্প্রদায়ের নেতাকে, একধারে হিন্দু আর সংখ্যালঘুদের মধ্যে তীব্র মেরুকরণ, অন্যদিকে পিছিয়ে পড়া জাতি, ওবিসি দলিতদের সমর্থন আদায় করাই হয়ে উঠল তাদের প্রথম কাজ, ওদিকে আদিবাসীদের মধ্যে তাদের কাজ চলছিল, আর এস এস প্রচারকরা স্কুল তৈরি করে, রাম মন্দির তৈরি করে, আদিবাসীদেরও বৃহৎ হিন্দু সমাজের মধ্যে  আনছিলেন, আদিবাসীদের ভোট কংগ্রেসের কাছ থেকে সরছিল, আদিবাসী এলাকায় বিজেপির বিরুদ্ধে ছিল খ্রিস্টান মিশনারিরা, ছিল মাওবাদীরা৷ দুজনের বিরুদ্ধেই বিজেপির লড়াইটা ছিল সহজ৷ একদল খ্রিস্টান, তথাকথিত বিধর্মী অন্যদল রাষ্ট্রবিরোধী। সব মিলিয়ে এক বৃহৎ হিন্দু মনোলিথিক সমাজের নির্মাণ ছিল বিজেপির পরিকল্পনা, এবং এই সবকটা কাজই উত্তর ভারতে, গোবলয়ে বিজেপি মন দিয়েই করছিল।

অন্যদিকে এইসব গরিব, দলিত, ব্যাকওয়ার্ড কাস্টের মসিহারা ক্ষমতা পেয়েই দূর্নীতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়লেন৷ ক্ষমতা ছাড়া তাদের আর কোনও লক্ষ্য রইল না৷ এবার তেমন কিছু নেতাদের টার্গেট করল বিজেপি৷ তীব্র কংগ্রেস বিরোধিতার জায়গা থেকে এমন কি কিছু সমাজতন্ত্রী, লোহিয়াইটসরাও ভিড়ে গেলেন বিজেপির সঙ্গে। দেশের ভোট ব্যাঙ্ক তখন ৪/৫/৬ ভাগে বিভক্ত। কাজেই ওই ৯০ থেকেই কোয়ালিশন এরা, তালমেল করে সরকার তৈরি হতে শুরু করল।

বিজেপির হিন্দুত্ববাদ যত চাড়া দিল, ততটাই মুসলিমরা শঙ্কিত হল, তারা কংগ্রেসের ওপরে ভরসা রাখতে পারছিল না, কখনও লালু, কখনও মুলায়মের দিকে ঝুঁকছিল৷ কংগ্রেসের শেষ ভরসা মুসলিম ভোটেও ভাগ হল, এই ফ্রাকচার্ড ম্যান্ডেট, ভাঙচোরা মানুষের রায় হঠাৎ করেই কমিউনিস্টদের হাতে মোয়া এনে দিল৷ সুযোগ এল সত্যি করেই দেশ জুড়ে অন্তত মানুষের সঙ্গে পরিচিত হবার৷ কিন্তু তারা তো কালিদাস হবার পণ করেই রেখেছিল৷ হয়েও গেল, তাদের সামনে সেটা ছিল শেষ সুযোগ, এরপরে তাদের ইতিহাস হারিকিরির। যদিও তারা তখনও প্রবল ভাবেই রয়েছে বাংলা, কেরল আর ত্রিপুরাতে।

হাজার হিন্দুত্ববাদের পাঠ পড়িয়েও, রামমন্দিরের আন্দোলনের পরেও বিজেপি নিজে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না৷ কংগ্রেস এসে মন দিল নতুন অর্থনৈতিক বিপ্লবে, বিশ্বায়ন, ভুবনায়ন, উন্নয়ন ইত্যাদি শব্দ এল৷ খোলা বাজার, জিডিপি, শেয়ার মার্কেট বুম এবং ক্রাশ চলতে থাকল, মোবাইল ইন্টারনেট এসে বদলে দিল অনেক কিছুই৷ বিজেপি তখনও দিশেহারা। কংগ্রেসের উন্নয়ন, বিশ্বায়নের হাত ধরে বিরাট বিরাট স্ক্যাম, অনিবার্য মূল্যবৃদ্ধিও হল, তার বিরুদ্ধে জনরোষও ছিল প্রবল, কিন্তু আবার সেই কালিদাসেরা, বামপন্থীরা কংগ্রেসের থেকে সমর্থন তুললেন৷ তুললেন এমন এক ইস্যুতে, যা নিয়ে আম আদমির কোনও মাথা ব্যাথা ছিল না৷ এটা ছিল শেষ হারিকিরি।

কংগ্রেসের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে বিজেপি দেশ জুড়ে হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে সঙ্গেই দুর্নীতি আর মুল্যবৃদ্ধিকে হাতিয়ার করল৷ দেশজুড়ে সিভিল সোসাইটি গুজরাট মডেল আর উন্নয়ন নিয়ে হাততালি তো দিচ্ছিলেনই, এবার দুর্নীতি আর মুল্যবৃদ্ধি যোগ হল৷ অন্যদিকে বামপন্থীরা লড়াইয়ে পিছিয়েই ছিলেন৷ মোদি গুজরাট মডেল আনলেন আর বললেন আমি একজন ওবিসি, পিছিয়ে পড়া মানুষের ঘর থেকে এসেছি, মানুষ শুনল।

ততদিনে বাম দূর্গ ভেঙে গেছে বাংলায়৷ ভেঙেছে কারণ বিশ্বায়ন, শিল্পায়ন আর উন্নয়নের তত্ত্ব দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি চলতে পারে না৷ চলার কথাও নয়, চললও না। টিঁকে থাকত, কিন্তু কংগ্রেসের সাহায্য নিয়ে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ততদিনে প্রবল জনভিত্তি তৈরি করে ফেলেছেন৷ কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার ফেলার পরে রাজ্যে কংগ্রেস তৃণমূল জোট হওয়াটা ছিল অনিবার্য৷ বাংলা হাত থেকে গেল। তাহলে দাঁড়ালটা কি? বিজেপির দুই প্রধান প্রতিপক্ষ৷ কংগ্রেস আর কমিউনিস্ট৷ দুজনেই ব্যাকফুটে। বিজেপি এইবারে একে একে হিন্দু সমাজের পিছিয়ে পড়া, দলিত, ওবিসিদের নিয়ে এক বৃহৎ হিন্দু সমাজের কাজেও সফল, কাজেই তার লড়াই এখন তাদের প্রাইমারি কনফ্লিক্ট কে ঘিরে, হিন্দু বনাম সংখ্যালঘু, যত মেরুকরণ হবে তত লাভ৷ তারা জয় শ্রী রাম বলবে, যুদ্ধের উন্মাদনা নিয়ে রামনবমী করবে, দিকে দিকে রাম মন্দির গড়ে তোলার কথা বলবে, রাম রাজ্যের কথা বলবে, রাম আমাদের জাতীয় পুরুষ বলবে, একটারও বিরোধিতা করলে আপনি সেই বৃহৎ হিন্দু সমাজের বাইরে, তাদের বিরোধী। এটাই তাদের সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ, এটাই তাদের রাজনীতি।

দক্ষিণে কিন্তু বিজেপি কল্কে পায়নি৷ কর্ণাটকে কংগ্রসের ভুলে লিঙ্গায়েত ভোট নিয়ে তারা ক্ষমতায় আছে, বাকি জায়গায় তারা দাঁত ফোটাতে পারেনি৷ কারণ সেই অর্থে রামের নামে রাজনীতি দক্ষিণ ভারতে চলেনি৷ আর উত্তর পূর্বাঞ্চলে বিজেপি ক্ষমতা দখল করেছে, কোনও আদর্শের ভিত্তিতে নয়, টাকা আর ক্ষমতার জোরে, যেদিন বিজেপি কেন্দ্রে হারবে, ওই তাসের ঘর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে, মিলিয়ে নেবেন।

কিন্তু গোবলয়ে তাদের রাজনীতি হিন্দু সমাজকে এক জায়গায় এনেই, যাকে সাংবাদিকরা স্যোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর নাম দিয়েছেন, সেই অস্ত্রে তারা উত্তরপ্রদেশে জিতেছে, এবং দলিত, পিছড়ে বর্গ বা অতি পিছড়ে বর্গের সমর্থন পেয়ে তারা মনে করেছে, তৈরি হয়ে গিয়েছে সাধের বৃহৎ হিন্দু সমাজ, তাই তারা এবার তাদের মূল লড়াইয়ে ফিরে গেছে, তারা আবার রামমন্দির, হিন্দু পুনর্জাগরণ, বেনারস, মথুরা, কাশী ইত্যাদি নিয়ে ভোটে নামার কথা বলছে, ৮০ আর ২০র লড়াই বলছে। এসব কথায় চিঁড়ে ভেজেনি দিল্লিতে, ঝাড়খন্ডে, বাংলায় বা দক্ষিণে তামিলনাড়ু বা কেরালাতে, কিন্তু উত্তর প্রদেশে এটাই কাজ করবে, কারণ বিজেপির ধারণা লড়াইটা হিন্দু মুসলমানে করিয়ে দিতে পারলে, তারা আবার ৪২/৪৪% ভোট নিয়ে ড্যাং ড্যাং করে সরকার তৈরি করবে,

ঠিক এইখানে অখিলেশ যাদব ওস্তাদের মারটা দিয়েছেন৷ যে রাজ্যে কম করে ৭০/৭৫% ওবিসি, দলিত, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষ, সেখানে লড়াইটাকে আগাড়ি আর পিছাড়ির লড়াইয়ে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন৷ বিজেপির হাতে কমন্ডল, অখিলেশ পুরনো অস্ত্র বেছে নিলেন৷ তার হাতে মন্ডল। ধর্মের লড়াই এখন চাপা পড়ে গিয়েছে৷ কুর্মি, নিষাধ, বাল্মিকী, লোধ, মলহা, সুহেল সমাজ, ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস আর দলিতেরা হিসেব চাইছে, এই ক’বছরে তাদের প্রাপ্তির হিসেব চাইছে৷ আর অখিলেশের ফিক্সড ডিপোজিট, জাঠ কৃষকরা, রাজ্য জুড়ে মুসলিম ভোট, সব মিলিয়ে লড়াইয়ের এক প্রান্তে পড়ে থাকা অখিলেশ যাদব, সমাজবাদী পার্টি আর জোটসঙ্গীরা এখন সামনা সামনি, সময় আসেনি নিদান দেওয়ার, কিন্তু ক মাস আগেও যাদের মনে হচ্ছিল যোগী ফিরে আসছে আবার অতি সহজেই, সেই তারাই বলছে, হাওয়া বদলাচ্ছে, খুব দ্রুত বদলাচ্ছে৷ বদলের ধাক্কায় রামও সহায় নয় জেনেই অযোধ্যা নয়, যোগিজীর ভরসা গোরখনাথ মন্দির, তাঁর পরিচিত জায়গা, আর হাওয়া মোরগেরা তারস্বরে চিৎকার করে জানান দিচ্ছে হাওয়া ঘুরছে। অখিলেশ যাদব, ইউপির লড়াইকে আপার কাস্ট বনাম ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসে এনে দাঁড় করিয়েছেন৷ লড়াইতে ফিরে এসেছেন, এটাই তাঁর প্রাথমিক সাফল্য।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১
১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮
১৯ ২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫
২৬ ২৭ ২৮ ২৯ ৩০ ৩১  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

শনি ঠাকুরের কৃপা পাবেন এই ৫ রাশির জাতক
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে ঘরের মাঠে হারাল কলকাতা নাইট রাইডার্স
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
Aajke | রাজভবনেও গোকুল পিঠের গপ্পো
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
‘রেক্কা’-র পর ফের টলি ছবিতে বাঁধন!
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
বিজেপি কর্মীদের বাস লক্ষ্য করে পাথর, এলাকায় চাঞ্চল্য
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
রাজভবনে চর ঢোকানো হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, বিস্ফোরক বোস
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
জামিনে না, কাকার অন্ত্যেষ্টিতে যাওয়ার অনুমতি হেমন্তকে
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ওঠা শ্লীলতাহানির অভিযোগের তদন্তে বিশেষ দল পুলিশের
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
এমন ভোট হবে, দেড় মাসের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচন, হুমকি শুভেন্দুর
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
মনোনয়নে তৃণমূলের বিপুল উচ্ছাস, বিরোধীদের মৃত্যুঘন্টা বলে দাবি অরূপ চক্রবর্তীর
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
যোগ্য, অযোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব, অবস্থান পাল্টে জানাল এসএসসি
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
পুকুরে স্নান করতে নেমে মৃত্যু ৩ কিশোরের
শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team