ভগৎ সিং লিখেছিলেন, দীর্ঘ রচনা, কেন আমি নাস্তিক? মাথা উঁচু করেই লিখেছিলেন, কোনও অর্ধশিক্ষিত সাংবাদিক, বিজেপি আইটি সেলের সদস্য বা ভক্তরা সেদিন থাকলে দেশ ছাড়ার ফতোয়া দিত। আর আজ আমি কেন নাস্তিক লেখার সুযোগই নেই, কারণ নাস্তিক তো দূরের কথা ধর্মনিরপেক্ষতাও এখন একটা গালাগালি, তা নিয়েও পাত পাড়া সাংবাদিক থেকে বিজেপি আইটি সেল আর মোদি-ভক্তরা কেবল ঠাট্টা করে না, এখন তো জেলে পোরারও হুমকি দিচ্ছে। নাকি দরকারই নেই ধর্মনিরপেক্ষতার, এক আহাম্মক বিজেপি নেতা আমাদের চ্যানেলে বসেই বলে গিয়েছিলেন, যেদিন ক্ষমতা আসবে, মানে দুই সভাতেই দুই তৃতীয়াংশের বেশি সদস্য থাকলেই সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা কথাটাই তুলে দেবেন। অবশ্য এই কথা উনি কেন, এর আগে হুদো হুদো বিজেপি নেতারা বারবার বলেছেন, অবকি বার চারশো পার স্লোগানটা তো দেওয়াই হয়েছিল ওই সংবিধানটাকে চুলোর দোরে পাঠানোর জন্য। কিন্তু এনাদের আবার একটা মুখোশও আছে, ওপরে এনাদের সর্বোচ্চ নেতারা সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা ইত্যাদি নির্বিকারে বলে যান, ওগুলো হচ্ছে হাতির দিখানে কা দাঁত, আসল দাঁত থাকে তলার নেতা-কর্মী, আইটি সেল আর পেটোয়া সাংবাদিকদের কাছেই, যাঁরা কথায় কথায় সেকুলারিজমকে এক ঘৃণ্য অবজেক্ট হিসেবেই দাঁড় করান। ধরুন আমাদের মোদিজি, ২৮ এপ্রিল ২০১৪-তে বলছেন, We are secular not because the word was added in our Constitution. Secularism is in our blood. We believe in Sarva Pantha Sambhava. হ্যাঁ, সেকুলারিজমের কথা বলছেন, সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলছেন আর ওনার বাচ্চারা প্রকাশ্যেই হিন্দি হিন্দু করে বেড়াচ্ছে। বহু এমন মানুষও আছেন, যাঁদের ধারণা ভারতবর্ষ জরুরি অবস্থার মধ্যে ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭৬-এ ভারতবর্ষ ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক হয়ে উঠেছিল।
ইন্দিরা গান্ধী ৪২তম সংবিধান সংশোধন করে আমাদের সংবিধানের ঘোষণাপত্রে ধর্মনিরপেক্ষ এবং সমাজতান্ত্রিক এই দুটো শব্দকে ঢুকিয়েছিলেন এটা ঠিক, কিন্তু এমনও নয় যে তার আগে আমাদের দেশের সংবিধানে এমন কথা ছিল না। আমাদের সংবিধান কোনও এক বিশেষ ধর্মের ছিল এমনও নয় আবার আমাদের দেশের সমাজতন্ত্র এই কথাটা প্রথম শোনা গেল ওই ১৯৭৬-এ এমনটাও সত্যি নয়। ওই যে বললাম, কলকাতা টিভি চ্যানেলে বসেই তেমন এক বিজেপির মুখপাত্র বলেছিলেন, আমরা সংবিধান থেকে ওই ধর্মনিরপেক্ষ আর সমাজতান্ত্রিক দুটো কথা ছুড়ে ফেলেই দেব। এই বিজেপির মুখপাত্র এটা বলার সাহস কীভাবে পেলেন? বা তিনি যেটা বলছেন, সেটা কি তার দল বিজেপি বা তার সংগঠন আরএসএস বিশ্বাস করে না? করে বইকী, তাদের লক্ষ্যই তো এক হিন্দুরাষ্ট্র, ধর্মনিরপেক্ষতা বা সমাজতন্ত্র দুটো শব্দই তো তাঁদের কাছে ঘৃণ্য, এর বিরুদ্ধেই তো তাঁরা চিরটাকাল লড়েছেন। এক নিষ্ঠাবান হিন্দু, যিনি মরার আগে পর্যন্ত হে রাম বলেই মারা গিয়েছিলেন, সেই গান্ধীকেও তাঁরা হত্যা করেছিলেন, হত্যার ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিলেন, কারণ গান্ধীজি হিন্দু ছিলেন, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন। সেই দলের থেকে বারবার এই সেকুলার কথাটাকে ব্যঙ্গ করা হয়, ধর্ম নিরপেক্ষতার নতুন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, কেন? এই দলই সংবিধানকে মেনে নেননি, জাতীয় পতাকাকে মেনে নেননি, জাতীয় সঙ্গীতকে মেনে নেননি। এঁদের গুরুজি গোলওয়ালকরের বাঞ্চ অফ থটের ছত্রে ছত্রে সেই সংবিধান বিরোধিতার কথা লেখা আছে। সেই তাঁরাই আজ ক্ষমতায়, এবং পূর্ণ বহুমত পাওয়ার পর থেকেই লক্ষ্য দেশের সংবিধান, দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা। উপর থেকে নীচ অবধি এই প্রচার তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফারাকটা হল উপরের শয়তানেরা জেনেবুঝে শয়তানি করে যাচ্ছেন, নীচের অশিক্ষিত, মূর্খ ভক্তরা না জেনেই সেই কথাগুলো বলে যাচ্ছেন। তাঁদেরই একজন বলে গেলেন সংবিধান থেকে, তার প্রস্তাবনা থেকে ধর্ম নিরপেক্ষ আর সমাজতান্ত্রিক শব্দগুলো ছুড়ে ফেলে দেব।
তলার এই ভক্তদের কথা বাদ দিন, এঁরা তো দাবার বোড়ে মাত্র। আসুন রাজারাজড়া নিয়ে কথা বলা যাক। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী রামমন্দিরে রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার পরে এবার সংবিধান নিয়ে পড়েছেন। এমনিতে তাঁর বহু বিষয়ে অসাধারণ প্রজ্ঞার কথা আমরা জানি, আমরা জানি ওনার ইতিহাস, বিজ্ঞান এমনকী অঙ্ক চর্চার সেই কিম্ভূতকিমাকার হাস্যকর পাণ্ডিত্যের কথা। সেই তিনিই জানিয়েছিলেন সংবিধানে, দেশের সংবিধানেই তো রাম আছে, তার আগেই তথ্য সম্প্রচার দফতর থেকে সংবিধানের প্রথম লিখিত প্রস্তাবনার ছবি ভাইরাল করে দেওয়া হল। পরিকল্পনা এবং তার উদ্দেশ্য লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। প্রধানমন্ত্রী বললেন সংবিধানে রাম আছে, সরকার জানিয়ে দিল সংবিধানের প্রস্তাবনাতে ধর্মনিরপেক্ষতা বা সমাজতন্ত্র কথাগুলো নেই। অতএব বচ্চেলোগ তালি বাজাও আর ভক্তরা সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ছুড়ে ফেলার কথা বলো এবং ধর্ম বিশ্বাসীদের কাছে পরিষ্কার তথ্য পৌঁছে দেওয়া হল সংবিধানে রাম আছে। রামের ছবি আছে, তেমন এক সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ হয় কী করে? এক অর্ধসত্য দিয়ে সত্যকে ঢেকে দেওয়ার পরিকল্পনা তো আজকের নয়, ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরও বলেছিলেন অশ্বথামা হত ইতি কুঞ্জরঃ, অর্থ অশ্বথামা নামে এক হাতি মারা গেছেন, কিন্তু ওই ইতি কুঞ্জরঃ শব্দটা তিনি এমন করে বলেছিলেন যে তা দ্রোণাচার্যের কানে পৌঁছয়নি, তিনি তাঁর পুত্র হারানোর শোকে ধনুর্বাণ ফেলে দিতেই অর্জুন তাঁকে বধ করে। এদিকে পাণ্ডবেরা ছিলেন ন্যায়ের পক্ষে, অধর্মের বিরুদ্ধে, তো সেখান থেকেই এই অর্ধসত্য বলার শিক্ষা নিয়েছে এই আরএসএস বিজেপির নেতারা। দুনিয়ার ইতিহাস বলে স্বৈরতন্ত্রীরা মিথ্যে বলেন, বিরাট মিথ্যে বলেন, এবং অর্ধসত্যও বলেন। তো আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো হামেশাই মিথ্যে বলেন, এবারে তাঁর মতো করে আবার একটা মিথ্যে বা বলা যাক একটা অর্ধসত্য বললেন, বললেন আমাদের সংবিধানে রাম আছে, রামের ছবি আছে আমাদের সংবিধানের প্রথম লিখিত বইটিতে। বোঝাতে চাইলেন রামময় এক সংবিধান আবার সেকুলার কী করে হবে?
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ধনখড় করলে লীলা, মমতা করলে বিলা?
চলুন একটু নেড়েঘেঁটে দেখা যাক, সত্যিটা কী? সত্যিই কি আমাদের সংবিধানের প্রথম লিখিত বইয়ে রামের ছবি আছে? হ্যাঁ, আছে। কেবল রাম নয়, রাম সীতা লক্ষ্মণ আছেন, শ্রীকৃষ্ণও আছেন। আসলে সংবিধানসভায় সংবিধানের খসড়া পাশ হয়ে যাওয়ার পরেই জওহরলাল নেহরু গান্ধীজির অত্যন্ত প্রিয় চিত্রকর শান্তিনিকেতনের নন্দলাল বসুকে বলেন আমাদের সংবিধানের এক মূল লিখিত প্রতিলিপি থাকা উচিত, আপনার নেতৃত্বেই এই কাজ হোক। সংবিধানের ২২টি অধ্যায়ের অলঙ্করণের দায়িত্ব তিনি নেন, সঙ্গে ছিলেন তাঁর শিষ্য বিউহর রামমনোহর সিনহা, দীননাথ ভার্গব ইত্যাদিরা, ইংরিজি হরফের ক্যালিগ্রাফিতে ছিলেন প্রেমবিহারী নারায়ণ আর হিন্দিতে বসন্তকৃষ্ণ বৈদ্য। ২৫১ পাতার এই মূল সবিধানের প্রতিলিপি চার বছরে শেষ হয়, ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০-এ এই সংবিধান আনুষ্ঠানিকভাবে সবার সামনে রাখা হয়। এবং এটা সত্যিই যে এই অলঙ্করণে রাম আছেন, কেবল রাম নয়, রাম সীতা লক্ষ্মণও আছেন। অলঙ্করণের দায়িত্বে থাকা নন্দলাল বসু সংবিধানের ২২টা অধ্যায়ের জন্য কোন কোন বিষয় বেছেছিলেন? ভারতবর্ষের বিভিন্ন সময়কালকে এই ২২টা অধ্যায়ের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। প্রথমেই ছিল অশোক স্তম্ভ, কারণ সেই অশোকস্তম্ভ থেকে নেওয়া সিংহমূর্তি ততদিনে আমাদের ন্যাশনাল এমব্লেম। এরপরের ভাগগুলো ছিল মহেঞ্জোদারো সভ্যতা, বৈদিক সভ্যতা, পুরাণকালীন সময়, অর্থাৎ বেদ উপনিষদের স্তোত্রপাঠ, যজ্ঞের পরে জন্ম নিচ্ছে পুরাণ, কাল্ট ফিগার ইন মেকিং। তারপরেই আছে মহাজনপদ ও নন্দ যুগ, মৌর্য যুগ, গুপ্ত যুগ, মধ্যযুগ যখন দাক্ষিণাত্যে নতুন রাজবংশ বিকশিত হল, ইসলামিক যুগ, আসছে শক হুণ পাঠান মোগল, মিশে যাচ্ছে আমাদের দেশের মাটিতে, ব্রিটিশ যুগ, দেশ লড়াই করছে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে, জাতীয় মুক্তি বা স্বাধীনতার আন্দোলন, অহিংস এবং সহিংস আন্দোলন।
এই সময়ের থেকেই বেছে নেওয়া বিষয় নিয়ে অলঙ্করণ করা হয়েছিল আমাদের সংবিধানের। আলাদা করে দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ বলতে হয়নি, ২২টা অধ্যায়ে রাম সীতা লক্ষ্মণ, শ্রীকৃষ্ণ আছেন। আছে মহেঞ্জোদারোর সেই ষাঁড় আর সেই হরফের ছবি যার মানে এখনও উদ্ধার করা যায়নি, আছে বৈদিক সময়ের গুরুকুলের ছবি, বুদ্ধের বুদ্ধ হয়ে ওঠার সেই ছবি, মহাবীর জৈনের তপস্যার ছবি, বিক্রমাদিত্যের রাজসভার ছবি, মহাজনপদের সময়কার নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি, ওড়িশার শিল্পকর্ম, শিবের নটরাজমূর্তির শিল্পকর্ম, দক্ষিণের চোল সাম্রাজ্যের সময়ে শৈবদের উথ্বানের ছবি, দক্ষিণে মামল্যপূরমের শিল্পকীর্তি, গঙ্গার নেমে আসা বা অর্জুনের তপস্যার ছবি, আছে আকবরের রাজসভার ছবি, শিবাজি মহারাজের ছবি যেমন আছে তেমনই আছে গুরুগোবিন্দ সিংয়ের ছবি, আছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের দুই মুখ, ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাইয়ের ছবি, পাশেই টিপু সুলতানের ছবি, আছে গান্ধীজির ছবি, তিনি রাস্তায়, সামনে তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন দেশের মানুষ আর তারপরেই আমাদের উত্তর পূর্বাঞ্চলে নেতাজির ইন্ডিয়ান ন্যাশন্যাল আর্মির লড়াইয়ের ছবি। সেই ছবিতেই লেখা সুভাষচন্দ্র বসুর সেই উক্তি, দেশের জন্য পবিত্র এই স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য আশীর্বাদ চাই আপনার, আপনিই জাতির পিতা। হ্যাঁ এটাই আমাদের সংবিধান যেখানে রাম আছেন, সীতা লক্ষ্মণও আছেন, শ্রীকৃষ্ণও আছেন, আবার বুদ্ধ, মহাবীর, গুরুগোবিন্দ সিং আছেন, আছে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, আছে আকবরের রাজসভা, শিবাজি আছেন, ঝাঁসির রাণী আছেন টিপু সুলতানও আছেন। মাথায় রাখুন যাঁরা বলেন নেতাজির ঘোর বিরোধী ছেলেন জওহরলাল নেহরু, তিনি নাকি নেতাজির সমস্ত ইতিহাস মুছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, সেই জওহরলাল নেহরুর সময়েই তাঁর নির্দেশে সংবিধানের এক প্রতিলিপি তৈরি হচ্ছে তার অলঙ্করণে যে সুভাষ, তাঁর পরনে সৈনিকের পোশাক, সঙ্গে আজাদ হিন্দ ফৌজ।
আমাদের সংবিধানের প্রতিটা অক্ষরে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা লেখা আছে, প্রত্যেকের নিজের ইচ্ছেখুশি মতো ধর্ম পালনের অধিকার দেওয়া আছে, ধর্মের ভিত্তিতে জাতের ভিত্তিতে, ভাষা বা বর্ণের ভিত্তিতে কোনওরকম বৈষম্যকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বলা আছে। ১৯৭৬-এ ইন্দিরা গান্ধী তাঁর রাজনৈতিক হিসেব নিকেশ অনুযায়ী একটা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন মাত্র, তিনি লিখলেন আর সেদিন থেকে আমাদের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ হল তেমন তো নয়। সেই জরুরি অবস্থার পরে তখনকার জনসঙ্ঘ, আজকের বিজেপি নেতারাও তো সরকারেই ছিলেন, ৪২তম সংবিধান সংশোধনীর বহু কিছুকে আবার পাল্টানো হয়েছিল, বদলানো হয়েছিল, কিন্তু সংবিধানের প্রস্তাবনায় এই বদলে কেউ হাত দেননি কেন? কারণ এগুলো ছিল নেহাতই কসমেটিক চেঞ্জ, কিছু শব্দকে আনা মাত্র। আদতে আমাদের দেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ ছিল, এবং তা নিয়ে কোনও প্রশ্নই ছিল না। সংবিধান রচনার কাজে যে মানুষটি সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন সেই বি আর আম্বেদকর নিজেই ব্রাহ্মণ্যবাদ, মনুবাদের বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্ম ছেড়ে বৌদ্ধ হয়েছিলেন।
কিন্তু এক অর্ধসত্যকে হাজির করে দেশের প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চাইছেন আমাদের সংবিধান ছিল হিন্দুদের, তলায় ভক্তদের উল্লাস, তাহলে হোক হিন্দুরাষ্ট্র। আরএসএস-বিজেপি আজ কী বলতে চায় ভারতকে? দেশের মানুষকে? মুঘল সম্রাটদের অত্যাচারে বিভিন্ন সময়ে যে মন্দির ভাঙা হয়েছে, সেখানে মসজিদ গড়া হয়েছে সেগুলো পুনর্নির্মাণ করেই দেশের বিকাশ হবে? আচ্ছা, সারা পৃথিবীতে যে বিশ্ববদ্যালয়ের কথা সবাই জানে, যেখানে সারা বিশ্ব থেকে জ্ঞানার্জনের জন্য এসেছেন ছাত্ররা, সেই বৌদ্ধদের হাতে গড়ে ওঠা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় তো ভেঙেছিল এক অত্যাচারী মুসলমান রাজা, তারপর তা মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে দীর্ঘ হিন্দু শাসনকালেই। এক অনামী বাবরি মসজিদ ভেঙে মন্দির তৈরি করার কাজ তাঁরা করেছেন, কাশী মথুরাতেও একই দাবি তাঁরা করছেন, কই কোথাও তো নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে আবার গড়ে তুলে সারা বিশ্বের এক অন্যতম শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলছেন না? কেন বলছেন না? কারণ তাঁরা জানেন, শিক্ষা মানুষের চোখ খুলে দেয়, শিক্ষা মানুষকে প্রতিবাদী হতে শেখায়, শিক্ষা মানুষের মনে অজস্র প্রশ্নের জন্ম দেয়, কাজেই যে যত পড়ে সে তত বেশি জানে, তত কম মানে।