Placeholder canvas
কলকাতা সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ |
K:T:V Clock
চতুর্থ স্তম্ভ: জেলা ভাগ, সরকারের সিদ্ধান্ত, বিরোধিতা নিয়ে দু চার কথা
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By: 
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০২২, ১০:০০:২২ পিএম
  • / ২৭১ বার খবরটি পড়া হয়েছে

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক সিদ্ধান্ত নিলেন৷ আমাদের রাজ্যের কিছু জেলার পুনর্বিন্যাস করলেন৷ নতুন জেলা তৈরি হল৷ নতুন জেলাগুলি হল, ১) সুন্দরবন জেলা (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) ২)ইছামতী জেলা-বনগাঁ সাব ডিভিশন (উত্তর ২৪ পরগনা) ৩) বসিরহাট ( চূড়ান্ত নামকরণ পরে হবে) ৪) রাণাঘাট (নদিয়া) ৫) বিষ্ণুপুর (বাঁকুড়া) ৬) বহরমপুর ৭) কান্দি (মুর্শিদাবাদ)। তাহলে সব মিলিয়ে আমাদের রাজ্যের জেলার সংখ্যা দাঁড়াল ৩০। এরকম এই প্রথম? না, মোটেও না। ১৯৪৭ এ পশ্চিমবঙ্গ ঠাঁই পেল মানচিত্রে তখন জেলা ছিল ১৪টি৷ তারপর পুরুলিয়া এসেছে, দিনাজপুর ভেঙেছে, মেদিনীপুর ভেঙেছে, চব্বিশ পরগনা ভেঙেছে এবং সব মিলিয়ে ক’দিন আগেও রাজ্যের জেলা ওই ১৪ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৩ এ। 

প্রত্যেকবারই প্রশাসনিক সুবিধের কথা বলা হয়েছে, বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলা হয়েছে, সারা দেশের ছবিও একই রকম৷ রাজ্যে রাজ্যে জেলার পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে, জেলার সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের রাজ্যে সেই সংখ্যা বেড়ে এখন হল ৩০। জেলা ভাঙা হলে কী হয়? মানুষের অনেক সুবিধে হয়৷ বিরাট জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে হয় কোর্ট কাছারির প্রয়োজনে৷ জেলা সদর দফতরগুলোতে যেতে হলে সেই দুরত্ব অনেকটা কমে। জেলা হয়ে ওঠার পরে প্রশাসনিক কাজে অনেকটা সুবিধে হয়৷ একজন ডিএমকে আগের চেয়ে অনেকটা কম জায়গায় নজর রাখতে হয়৷ পুলিসি ব্যবস্থাতেও একই সুবিধে হয়৷ অসুবিধে, মোটের ওপর একটাই, প্রশাসনিক ভবন থেকে শুরু করে একগুচ্ছ নতুন সরকারি কর্মচারির মাইনে ইত্যাদির দায় চাপে রাজ্যের অর্থনীতির ওপরে। সে দায় সামলাতে পারলে জেলা ছোট হলে মানুষের লাভ, এটা পরিস্কার। 

তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রশাসনিক কাজের সুবিধের কথা বলেছেন৷ নতুন সাতটা জেলা তৈরির কথা বলেছেন, গেজেট নোটিফিকেশন এখনও হয়নি, হয়ে যাবে। তবে সিদ্ধান্ত আচমকা ছিল, কথা চলছিল বটে কিন্তু কোথায় কী হবে, তা আগে কেউ আঁচ পায়নি, কবে হবে, তা কারোরই জানা ছিল না। কিন্তু এনিয়ে আগে ফাটকা হয়েছে৷ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ভাগ হবে, বারুইপুরে চলে যাবে প্রশাসনিক কেন্দ্র, ব্যস পেয়ারাবাগানের জমি বিক্রি হয়ে গেল৷ এক বাম নেতার নেতৃত্বে দালালেরা সেদিন নেমেছিল৷ বিঘে বিঘে জমির বায়না হয়েছিল৷ সেই নরকগুলজারে ঢুকে পড়েছিল চিটফান্ড ব্যবসায়ীরা৷ চলে যান বারুইপুরে, এসব ওপেন সিক্রেট৷ তো এবার বোঝা তো দূরের ব্যাপার, গুজব ওঠারও আগে জেলা ভাগ হয়ে গেল৷ বিরোধিতাও শুরু হয়েছে। একধরনের বিরোধিতা হল নাম ও ঐতিহ্য বজায় রাখা নিয়ে৷ মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এসব প্রাচীন নামে অনেক কাহিনি, অনেক ইতিহাস, অনেক গল্প মাখা রয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই নাম নিয়ে কিছু কথা উঠেছে৷ রাজ্যসরকারও শুনেছি তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে৷ তবে নাম নিয়ে বিরোধিতা স্বাভাবিক, মানুষ মাত্রেই ছেলেবেলার কাঠপেনসিল, প্রাচীন শিবমন্দির, কিনু গয়লার গোয়াল, প্রথম পাওয়া তামার হোক, তাই সই, ফিতে ঝোলানো মেডেল এসব নিয়ে নস্টালজিয়ায় ভোগে৷ আর এ তো একটা গোটা জেলা৷ যা সে ছোট্টবেলা থেকে দেখে আসছে, মুর্শিদ কুলি খাঁ এর মুর্শিদাবাদ, সে তখনকার ম্যাপ আর এখনকার ম্যাপে যতই ফারাক থাকুক না কেন, নবাব কেবল নয় নবাবের বংশধরেদেরও হদিশ নেই৷ তা হোক, তা নিয়ে মানুষের নস্টালজিয়া থাকবে৷ 

নদিয়া নিয়েও তাই৷ নদের নিমাই নিয়ে একটু উথালি পাথালি তো দিদিমণিরও আছে৷ কাজেই এ নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে বৈকি। কিন্তু অন্য আর এক বিরোধিতা আসছে। আম আদমি বলবেন, কোথায়? কই? রাস্তাঘাটে পানের দোকানে, কোথাও তো কোনও বিরোধিতা চোখে পড়ল না। সত্যিই আম আদমির চোখে বিরোধিতা কোথায়? আছে আছে, আজকাল বিরোধিতা সন্ধ্যে হলে কলতলার আসরে, যেখানে ৬০/৬৫/৭০ ডেসিবেলে চিৎকার হয়৷ তারপর ফেসবুকে৷ মাইনে করা আছে৷ অত্যন্ত আদর্শবান বিনি পয়সায় পোস্ট করার লোকজন আছে, টুইটার আছে, ইউটিউব আছে৷ আজকাল প্রতিবাদ সেখানে হয়৷ ঝামেলা কম, রাস্তায় হাঁটার দায় নেই, পুলিসের ধাক্কা বা লাঠির দায় নেই, টিয়ার গ্যাস নেই, জল কামান নেই, পাখার তলায় বসে বা এসি চালিয়ে গর্জে ওঠো জনগণ, প্রতিরোধ গড়ে তোলো ইত্যাদি অনায়াসে লেখা যায়৷ 

আম আদমি দেখে না তাতে কী? প্রতিবাদ তো হল। সেই বিরোধিতা হচ্ছে, সরকার বিরোধী দুই গোষ্ঠী, কংগ্রেস বাম এবং বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে হইহই রইরই প্রচারে নেমেছে৷ কেন এতগুলো জেলা? যত জেলা তত নোট, জেলা বাড়ানো হচ্ছে টাকা তোলার জন্য ইত্যাদি ইত্যাদি। মোদ্দা কথা হল জেলার সংখ্যা বাড়ছে, এতে দুর্নীতিও বাড়বে। দেখলাম, বোঝার চেষ্টা করলাম। তারপর হঠাৎ মাথায় এল, দেশে তো একমাত্র পশ্চিমবাংলাই নয়, আরও তো রাজ্য আছে, সেখানে কী অবস্থা? একটা সোজা উপায় আছে, রাজ্যের জনসংখ্যাকে জেলার সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে গড়ে একটা জেলায় সেই রাজ্যের কত লোক বাস করে সেটা সহজেই বোঝা যাবে। আসুন সেই অঙ্কটা করে ফেলি। 

এদেশের একটাই রাজ্যে আছেন বামপন্থীরা৷ জেলার সংখ্যা বাড়ানোর পরে তাদের তরফেই সোশ্যাল মিডিয়াতে হচ্ছে প্রতিবাদ৷ তো সেই কেরালার জনসংখ্যা কমবেশি ৩.৪৬ কোটি৷ মানে ৩৪৬ লক্ষ। জেলা কটা ? ১৪টা৷ তার মানে জেলা পিছু কেরালাতে ২৪.৭ লক্ষ মানুষ থাকেন। আমাদের রাজ্যের হিসেবটাও দেখা যাক। বাংলার জনসংখ্যা ৯.০৩ কোটি, জেলা বেড়ে এখন ৩০টা। মানে আমাদের বাংলায় জেলা পিছু ৩০.১ লক্ষ মানুষ থাকেন, কেরালার চেয়ে অনেক বেশি। চলুন উত্তর প্রদেশে৷ জনসংখ্যা ২০.৪২ কোটি৷ জেলা ৭৫ টা। মানে উত্তরপ্রদেশে জেলা প্রতি ২৭.২ লক্ষ মানুষ থাকেন৷ মধ্যপ্রদেশে জনসংখ্যা ৭.৩৩ কোটি, জেলা ৫২ টা৷ মানে জেলা প্রতি ১৪ লক্ষ মানুষ থাকেন। বিহার জনসংখ্যা ৯.৯ কোটি, জেলা ৩৮টা, জেলা প্রতি মানুষের সংখ্যা ২৬ লক্ষ। ওড়িষা জনসংখ্যা ৪.৩৭ কোটি, জেলা ৩০ টা৷ জেলা প্রতি গড় জনসংখ্যা ১৪.৫ লক্ষ। মোদি – শাহের গুজরাতের জনসংখ্যা ৬.২৭ কোটি, জেলা ৩৩ টা৷ জেলা প্রতি মানুষের সংখ্যা ১৯ লক্ষ। মহারাষ্ট্রের জনসংখ্যা ১১.৪২ কোটি, জেলা ৩৬টা, জেলা প্রতি গড় জনসংখ্যা ৩১.৭ লক্ষ। 

এগুলো দেশের মোটামুটি বড় রাজ্য এবং এই হিসেব বলছে জেলা প্রতি মানুষের সংখ্যা মহারাষ্ট্রে বাংলার তুলনায় সামান্য কম৷ কিন্তু কেরালা, বা গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের তুলনায় বাংলায় এই বৃদ্ধির পরেও জেলা পিছু অনেক বেশি মানুষ থাকেন। এখন ফেসবুকের সিপিএম বা বিজেপি এই হিসেবের খবর রাখে না, রাখার কথাও নয়৷ ওখানে তো যা খুশি বলার অধিকার দেওয়া আছে। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে, কিছুদিন পরেই ওই রাণাঘাট বা ইছামতি জেলার কোনও কৃষক ট্রাক্টর বা সাবমার্সিবল পাম্পের সাবসিডির জন্য জেলা সদরে যাবেন, ঘন্টা খানেকের মধ্যে কাগজ জমা দিয়ে ফিরবেন, জেলা সদর হাসপাতাল তৈরি হবে, জেলা শিল্প দফতর কাজ করবে, জেলা কৃষি দফতরের সাহায্য পাওয়া যাবে৷ তখন সেই মানুষজন খুশি হবেন, সিদ্ধান্তকে ফেসবুকে নয়, সামনে দাঁড়িয়েই স্বাগত জানাবেন৷ ফেসবুকে তখনও চলবে অন্ধ বিরোধিতা৷ কেউ কেউ বিরোধিতা করছেন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য৷ কেউ কেউ হিন্দু খতরে মে হ্যায় তাই বিরোধিতায়, কিন্তু এই সত্যিটা জানার পরে বিরোধিতা চালিয়ে গেলে বোঝা যাবে, বিরোধিতার বিনিময় মূল্য আছে, টাকায় আছে, আবার জেলে না পোরার প্রতিশ্রুতিতে আছে, কিন্তু আছে।

আমরাও চাইব নাম নিয়ে আরও একটু চিন্তা ভাবনা করুক সরকার৷ নামে কি বা এসে যায় একটা আপ্ত কথা, নামে অনেক কিছুই এসে যায়। আজ থেকে ২০ বছর পরে যে ছাত্র মুর্শিদ কুলি খাঁর কথা পড়বে, তার পত্তন করা শহর মুর্শিদাবাদের কথা পড়বে, তারা মুর্শিদাবাদকে এক অতীত অধ্যায় হিসেবেই জানবে, এটা কাম্য নয়। নদের নিমাইয়ের সাধের নদিয়া চলে যাওয়াটা খুব স্বস্তিদায়ক তো নয়৷ তাই নাম নিয়ে? হ্যাঁ বিরোধিতার জায়গা আছে বৈকি৷ কিন্তু সংখ্যা নিয়ে? না কোনও প্রশ্নই নেই, কারণ এই জেলার সংখ্যা বাড়ার আগে আমাদের বাংলাই ছিল দেশের এমন এক রাজ্য যেখানে জেলা প্রতি মানুষের সংখ্যা ছিল সব থেকে বেশি৷ কেরালাতে জেলা প্রতি ২৪.৭ লক্ষ ছিল৷ ইউপিতে ছিল ২৭.২ লক্ষ৷ আর আমাদের বাংলায় জেলা প্রতি থাকতেন ৩৯.২ লক্ষ মানুষ৷

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬
১৭ ১৮ ১৯ ২০ ২১ ২২ ২৩
২৪২৫ ২৬ ২৭ ২৮ ২৯ ৩০
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধি করছে ইরান, আমেরিকার বিপদ বাড়বে?
সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
ড্র দিয়ে শুরু ম্যান ইউয়ের অ্যামোরিম যুগ, শীর্ষে লিভারপুলই
সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
সপ্তাহের প্রথম দিন, কেমন যাবে আপনার আজ
সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
ফের শহরে অগ্নিকাণ্ড!
রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
‘মুখ খুললে সরকার পড়ে যাবে’ নাবালিকাকে যৌন হেনস্তায় অভিযুক্তের মুখে বিস্ফোরক দাবি
রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবীদের পাত্তাই দিলেন না ভোটাররা?
রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
একটি লটারি অফিসে বিক্রি না করে ১ কোটি টাকার মালিক হলেন লটারি বিক্রেতা!
রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
বচসা থেকেই মারধোর? ইছাপুরে মর্মান্তিক মৃত্যু যুবকের
রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
ভেঙ্কটেশ আইয়ার’কে কেন এত দামে কিনল KKR?
রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
খামেনি কৌশলে এবার হারতে বসেছে আমেরিকা?
রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রেই ঝলসে চলেছে ইজরায়েল? বড় তথ্য ফাঁস
রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
রাশিয়ার হাতে নয়া রেঞ্জের মিসাইল! ওরেশনিক বদলে দেবে যুদ্ধের মোড়
রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
উপনির্বাচনে ছয়ে ছক্কা তৃণমূলের, বিরোধীরা দিশাহারা
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
বড়পর্দায় সুপার হিট! তবুও কেন ঘন ঘন পর্দায় দেখা মেলে না শ্রদ্ধার?
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
বিহারে ভরাডুবি! ভোটের ময়দানে খাতা খুলতে ব্যর্থ পিকে’র প্রার্থীরা
শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team