Placeholder canvas
কলকাতা বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫ |
K:T:V Clock
চতুর্থ স্তম্ভ, অনভ্যাসের ফোঁটা চড়চড় করে
সম্পাদক Published By:  • | Edited By:
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০২১, ১১:০৬:২৩ পিএম
  • / ৫২৭ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • • | Edited By:

অনভ্যাসের ফোঁটা চড়চড় করে, হ্যাঁ করে। সে ফোঁটার রং গেরুয়াই হোক আর লালই হোক, চড়চড় করে। দক্ষিণের কর্পোরেট কর্তা, ভেল্লুপিল্লাই সম্মুখনাদম শঙ্করলিঙ্গমকে দেখেছি, কপালজোড়া চন্দনের ফোঁটা, অনায়াসে সেই কপাল নিয়েই মিটিং, প্রজেক্ট অ্যানালিসিস করে যাচ্ছেন, ডিক্টেশন দিচ্ছেন সেক্রেটারিকে, অনায়াসে। আমার আপনার কপালে অত্তবড় তিলক কাটা থাকলে, মাথা ব্যাথা হয়ে যেত। কেন? অনভ্যাসের ফোঁটা চড়চড় করে, তাই।

আজ সেই অনভ্যস্তদের নিয়ে দু চারটে কথা। দেশ স্বাধীন হল, দেশের প্রান্তিক মানুষজনও জানতেন গান্ধীবাবা স্বরাজ আনলেন, যদিও গান্ধীজি নিজেই দ্বিখন্ডিত স্বাধীনতা নিয়ে খুশি ছিলেন না। কিন্তু দেশের মানুষজন কংগ্রেস আর গান্ধীকে আলাদা করে দেখেনি কোনও দিন। তাই স্বাধীনতা, তেরঙ্গা, সংবিধান, গণতন্ত্র ইত্যাদি প্রত্যেকটা শব্দবন্ধই ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। নেতাজী, ভগত সিং, দেশের, এই বাংলার সহিংস বিপ্লবী ধারা তাঁদেরর ইতিহাস শেষ করেছিল বহু আগেই ১৯৩০/৩২ এর পর সহিংস বিপ্লবী ধারা প্রায় স্তব্ধ ছিল। যারা ছিলেন, তাঁরা কংগ্রেসের মঞ্চেও ছিলেন, সোশ্যালিস্ট পার্টি, লোহিয়া, জয়প্রকাশ নারায়ণ ছিলেন। কিন্তু তারও সীমাবদ্ধতা ছিল, এবং তাঁদেরও এক জাতীয়তাবাদী চরিত্র ছিল। ৪২ এর ভারত ছাড় আন্দোলনে তাঁদের সামনের সারিতেই দেখা গিয়েছিল, তেরঙ্গা নিয়ে তাঁদের কোনও দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছিল না। তাহলে ছিল কাদের? ছিল হিন্দু মহাসভার, সাভারকর, গোলওয়ালকর হিন্দু রাষ্ট্রের উদগাতাদের, আর ছিল কমিউনিস্টদের। এই দুই সংগঠনের আলাদা পতাকা ছিল। তারা ১৯৪৭ এর স্বাধীনতাকে স্বাধীনতা বলে মনেই করেনি। তারা দেশের সংবিধান রচনার জন্য যে সংবিধান সভা তৈরি হল, তাতে অংশগ্রহন করেনি। সব মিলিয়ে দেশের স্বাধীনতা, পতাকা সংবিধান নিয়ে তাদের অন্য মতামত ছিল। কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী ছিল, তাদের এক বড় অংশ কংগ্রেসের মঞ্চকে কাজে লাগানোর চেষ্টাও করেছিল। সর্বভারতীয় ছাত্র সংগঠন, শ্রমিক সংগঠনে তাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যেই মাত্র জার্মানি সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণ করল, মিত্র শক্তি ইংল্যান্ড, আমেরিকা, রাশিয়া একসঙ্গে জার্মানি, ইটালি, জাপান অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াল, সেই মুহূর্ত থেকে এদেশের কমিউনিস্টরা তাদের ব্রিটিশ বিরোধিতা থেকে সরে এসে, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়া, ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে সরে আসা ইত্যাদি সিদ্ধান্ত নিতে থাকল। দেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলন থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল, দেশের সোশ্যালিস্ট বা অন্য বাম শক্তিগুলো থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল, এবং তারপর যখন স্বাধীনতা এল, তখন কমিউনিস্টরা শ্লোগান দিল, ইয়ে আজাদি ঝুঠা হ্যায়, ভুলো মাৎ, ভুলো মাৎ। তাদের শ্লোগান ছিল, লাল কিলে পর লাল নিশান, মাংগ রহা হ্যায় হিন্দুস্তান। তাদের ধারণায় ভারতবর্ষ, ঔপনিবেশিক দালালদের হাতে চলে গেছে, তখন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি দেশে নিষিদ্ধ, বি টি রণদিভের হাতে মেশিনগান, আজাদি হয়নি আজও তোর, নব বন্ধন শৃঙ্খলডোর, দুঃখ রাত্রি হয়নি ভোর। গান লিখছেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। তো কিছুদিন পরে দলের লাইনে কিছু পরিবর্তন এল, নেহেরুর সঙ্গে কথা বললেন নেতৃত্ব, বি টি রণদিভেকে দলের নেতৃত্ব থেকে অপসারণ করা হল, কিন্তু তখনও সংবিধান, স্বাধীনতা, জাতীয় পতাকা নিয়ে দ্বিধা কাটল না। জাতীয়তাবাদকে আন্তর্জাতিকতাবাদ দিয়ে ব্যাখ্যা করা শুরু হল, স্বাধীনতার দিনকে ছুটির দিন মনে করা, লাল পতাকা ধরা হাত, জাতীয় পতাকা ধরতে পারল না। সংবিধান তো ভুয়ো, তা তো বলাই আছে, সব মিলিয়ে এক বিরাট বিভ্রান্তি, যা থেকে কমিউনিস্টরা বের হতে পারেনি।
দেশ, জাতীয় পতাকা, সংবিধানও যে এক স্বাধীনতার কথা বলে, তা নিয়ে দোলাচলেই থেকেছে মূল ধারা এবং অন্য ধারার কমিউনিস্ট দলগুলো। যার ফলে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরেও, কাউর ভাইদের আত্মত্যাগের বিরাট ইতিহাসের পরেও, দেশের নামকরা বিপ্লবী, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, কল্পনা দত্ত, লক্ষ্মী সায়গল এর মত মানুষ জন কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেবার পরেও, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্য তাঁরা বহন করেন না। দেশের সাধারণ মানুষ, দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে কমিউনিস্টদের ভূমিকার কথা মনেই রাখেনি। কারণ ঠিক স্বাধীনতার পূর্ব মুহূর্তে কমিউনিস্টরা, স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল ধারা থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়, ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায় ভুলো মাৎ, ভুলো মাৎ বলতে বলতে তাদের দিন কেটে গেছে। যত দিন গেছে জাতীয় পতাকা, সংবিধান ততটাই অনভ্যাসের বস্তু হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, হিন্দু মহাসভা, গোলওয়ালকর, সাভারকর ইত্যাদি হিন্দু রাষ্ট্রবাদীদের ইতিহাসটা সম্পূর্ণ আলাদা, তারা ইংরেজ বিরোধী কোনও আন্দোলনেই কোনওদিন তো ছিলেনই না, উলটে তার বিরোধিতা করেছেন। ব্রিটিশদের কেবল সাহায্য নয়, কংগ্রেসের আন্দোলন ভাঙতে সাহায্য করেছেন। পুলিশে ধরিয়ে দেবার কাজ করেছেন। স্বাভাবিকভাবে তাঁরাও, দেশের স্বাধীনতাকে স্বাধীনতা বলে মনে করেন নি‌ জাতীয় পতাকা তোলার রেওয়াজ তাঁদের ছিল না। আরএসএসের প্রধান কার্যালয়, নাগপুরে ২০০১ পর্যন্ত জাতীয় পতাকা তোলা হয়নি। তাঁরা সংবিধান সভায় অংশগ্রহণ করেননি, সংবিধান নিয়ে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও আলাদা।

১৯৬৬ তে সঙ্ঘকর্তা গোলওয়ালকর তাঁর বই বাঞ্চ অফ থটস এ লিখলেন, Our Constitution too is just a cumbersome and heterogeneous piecing together of various articles from various Constitutions of Western countries. It has absolutely nothing, which can be called our own. Is there a single word of reference in its guiding principles as to what our national mission is and what our keynote in life is? No! তাঁদের দাবি ছিল মনুস্মৃতিই হোক দেশের সংবিধানের মূল দিশা, তার বহু আগেই ১৯৪৯, ৩০ নভেম্বর আরএসএসের পত্রিকা অর্গানাইজারের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, But in our constitution, there is no mention of that unique constitutional development in ancient Bharat… To this day his laws as enunciated in the Manusmriti excite the admiration of the world and elicit spontaneous obedience and conformity. But to our constitutional pundits that means nothing” দেশের কমিউনিস্টদের মতো তাঁরাও অনভ্যস্থ পতাকা, সংবিধান ইত্যাদি নিয়ে। আর এই দুই বিপরীত ধর্মী সংগঠনের মধ্যে তফাৎ হল, কমিউনিস্টরা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়েছিলেন। এক উজ্জ্বল অবদান রয়েছে তাঁদের। অসংখ্য ভ্রান্তির ফলে সে লড়াই মানুষ মনে রাখেননি। কিন্তু তার ইতিহাস আছে, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা, কায়ুর ভাইদের ফাঁসি, নৌ বিদ্রোহে কমিউনিস্ট সংগঠন ও নেতাদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। উল্টোদিকে স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশ্বাঘাতকের ভূমিকায় থাকলেও আরএসএস, হিন্দু মহাসভা, জনসংঘ, বিজেপির উগ্র জঙ্গী জাতীয়তাবাদ কিছুদিনের মধ্যেই তেরঙ্গা, জাতীয় পতাকা দেশপ্রেম, সীমান্তে হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই, পাক ভারত, পাক চীন যুদ্ধ বা সংঘর্ষের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রকে তাঁরা ব্যবহার করেছেন। ইদানিং তো দেশপ্রেমের কথা বললে তাঁরা নিজেরদেরকে এমনকি জওহরলাল, গান্ধীজিরও ওপরে রাখার চেষ্টা করছেন। সমস্যা হল, তাঁদের কাছে তেমন নেতা নেই। গান্ধী হত্যার দায় এখনও তাঁদের বইতে হচ্ছে। বল্লভভাই প্যাটেলের কথা বলছেন বটে, কিন্তু তাঁদেরও মাথায় আছে, এই প্যাটেল হিন্দু মহাসভাকে ব্যান করেছিলেন কেবল নয়, ব্যান তোলার ব্যাপারেও খুব আগ্রহ দেখাননি।

মোদ্দা কথা হল দেশ, স্বাধীনতা, সংবিধান, জাতীয় পতাকা ইত্যাদি নিয়ে চরম অনভ্যস্ত আজকের আরএসএস বিজেপি এবং দেশের কমিউনিস্টরা। আর অনভ্যাসের টিকে চড়চড় করছে। দুধার থেকেই। আরএসএসের তেমন দায় না থাকলেও বিজেপিকে দেশপ্রেমের জোয়ার আনতেই হচ্ছে। লালকেল্লার মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী গান্ধীবুড়ি মাতঙ্গিনী হাজরাকে তমলুক থেকে অসমে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, স্বাধীনতার ইতিহাস তাঁর বা তাঁদের জানার কথাও নয়। অন্যদিকে যেটুকু স্বাধীনতা আমাদের ছিল, আমাদের সংবিধান যেটুকু অধিকার আমাদের দিয়েছে, জাতীয় পতাকা যেটুকু মর্যাদা বহন করে, আরএসএস বিজেপির হাতে তাও ধ্বংস হবার মুখে। কমিউনিস্টরা এখন বুঝতে পেরেছেন, ওই জাতীয় পতাকা, ওই সংবিধান রক্ষার দায় তাদেরও আছে, তাই সংবিধানের কথা বলা, জাতীয় পতাকা তোলার আয়োজন। কিন্তু জাতীয় পতাকা উল্টো করেই তুলে দিচ্ছিলেন, বিমান বসু। ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল, তাই সামলে নেওয়া গেছে।
আসলে অভ্যস্থ হবার চেস্টা করছেন কমিউনিস্টরা, করুন, ভুল শুধরে নিন। আরএসএস বিজেপি কিন্তু ভুল শোধরানোর কথা ভাবছেই না, তাঁরা এখনও নৌটঙ্কির আসরে, সময় মতন ভাগওয়া ঝান্ডা দিয়ে তেরঙ্গাকে রিপ্লেস করা, মনুস্মৃতিকেই সংবিধানের মূল আলোকবর্তিকা হিসেবে তুলে ধরার লক্ষ্য থেকে একচুলও সরেনি, এটা বুঝে নেওয়াটা খুব জরুরি।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১ ১২
১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯
২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫ ২৬
২৭ ২৮ ২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

শুক্রবার দুপুরে বিকাশ ভবনে চাকরিহারাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
সমুদ্র সৈকতে বিকিনিতে নবনীতা, সঙ্গী কে ?
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
চাকরিহারাদের আন্দোলনের সমর্থনে পথে নামল বামফ্রন্ট
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
মা ছেলের গল্প, ‘আড়ি’র ট্রেলার চোখ ভিজবে!
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
কথাকলির পোশাকে এই অভিনেতাকে চিনতে পারছেন?
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
রাস্তায় জ্বলল উনুন, হল রান্নাও! মূল্যবৃদ্ধির অভিনব প্রতিবাদে তৃণমূল
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
বাড়ি পৌঁছনোর নামে তরুণীকে রিসর্টে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
ঋতুস্রাব, স্কুল ছাত্রীকে বের করে দেওয়া হল পরীক্ষার হল থেকে
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে মন্তব্য! মমতাকে আদালত অবমাননার নোটিস
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
স্পা সেন্টারের আড়ালে যৌন ব্যবসা রুখতে বিরাট নির্দেশিকা আদালতের
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
ছিটকে গেলেন গায়কোয়াড়, সিএসকের অধিনায়ক ধোনি  
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
ভিনদেশের নাগরিক রাজ্যের নির্বাচনে প্রার্থী! কী বলল হাইকোর্ট?
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
সিদ্দিকুল্লার নেতৃত্বে ওয়াকফ বিরোধী মিছিল, বিরাট হুঁশিয়ারি
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
হাসিনা এবং তাঁর কন্যার বিরুদ্ধে জারি গ্রেফতারি পরোয়ানা, কিন্তু কেন?
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
দুপুর গড়াতেই স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিজল মহানগরী, মিলবে কী স্বস্তি?
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team