Placeholder canvas
কলকাতা শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫ |
K:T:V Clock
চতুর্থ স্তম্ভ: ভারত জোড়ো যাত্রা, কংগ্রেসকে মানুষের সঙ্গে জুড়বে?
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By: 
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৮:৫০:৫১ পিএম
  • / ১৯১ বার খবরটি পড়া হয়েছে

কন্যাকুমারিকা থেকে শ্রীনগর, কংগ্রেস ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করেছে।  বিজেপির কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক, যাও রাহুল লাহোর কিংবা করাচিতে যাও, ভারত ভাগ করেছিলে, এখন ভারত জোড়ো।  যে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ হল, সেটা ভিনায়ক দামোদরদাস সাভারকারের।  হ্যাঁ সেদিন সাভারকার, হিন্দু মহাসভা, আরএসএস মুসলমানদেরর জন্য পাকিস্তান, হিন্দুদের জন্য ভারতবর্ষ চেয়েছিলেন, গান্ধী, আবুল কালাম আজাদ, নেহরু, প্যাটেলের জন্য সেটা সম্ভব হয়নি।  আমাদের দেশ দ্বিখন্ডিত হলেও শুরু থেকেই ছিল প্রত্যেকের, হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান, যে কোনও ধর্মের, যে কোনও বর্ণের, প্রত্যেকের।  শর্ত ছিল তাদেরকে ভারত রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকতে হবে, ব্যস।  সেদিন যারা দেশভাগের আদত পরিকল্পনার জনক, তারা আজ ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে ঠাট্টা করছে, করবেই তো।  এই বৈচিত্রময় ভারতের এক্কেবারে বিপরীতেই তো দাঁড়িয়ে আছে বিজেপি আরএসএস, তাদের স্বপ্ন, এক দেশ, এক ভাষা, এক ধর্ম, এক সংস্কৃতি, এক টোটালেটেরিয়ান ভারতবর্ষ যা সবার নয়, যা ভারতবর্ষের মূল সংস্কৃতিকেই মুছে দিতে চায়।  এই দেশে বহু রাজনৈতিক দল জন্ম নিয়েছে, তাদের নানান আদর্শ, সেসব আদর্শে সঙ্গে তাদের কতটা সম্পর্ক আছে, সেই আদরশ তারা কতটা মেনে চলে ইত্যাদি নিয়ে বহু তর্ক থাকতে পারে।  কিন্তু সংসদীয় রাজনীতির আঙিনায় আরএসএস – বিজেপি বাকি প্রত্যেকটা দল থেকেই আলাদা।  আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে এই আরএসএস, হিন্দু মহাসভাকে বাদ দিলে প্রতিটা সংগঠন এক স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, ভারতবর্ষকেই সামনে রেখে লড়ছিলেন। রবি ঠাকুর তাঁর কবিতায় সেই ভারতের স্বরূপের কথা বলেছেন,  

এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু মুসলমান।

এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ, এসো এসো খৃস্টান।

এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার,

এসো হে পতিত করো অপনীত সব অপমানভার।

মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা মঙ্গলঘট হয় নি যে ভরা,

সবারে-পরশে-পবিত্র-করা তীর্থনীরে।

আজি ভারতের মহামানবের সাগরতীরে। 

ঠিক তার উল্টোদিকে ছিল এই আরএসএস, হিন্দু মহাসভা।  তারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়েনি, তাদের সর্বোচ্চ নেতা সাভারকার আন্দামান জেলে বস মুচলেকা দিয়েই জানিয়েছিলেন, তিনি ব্রিটিশদের বিরদ্ধে লড়বেন না, যারা লড়ছেন, তাদেরকেও সঠিক পথে নিয়ে আসবেন।  তিনি জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সাফ জানিয়েছিলেন লড়াই মুসলমানদের বিরুদ্ধে, লড়াই হিন্দুরাষ্ট্রের জন্য।  আমরা, দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষজন বুঝতে পারিনি এই বিষাক্ত সংগঠনের বিস্তৃত পরিকল্পনার কথা।  দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলও বুঝতে পারেনি, এই সংগঠন একদিন আমাদের ভারতবর্ষের আত্মাকে খুন করবে, তার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করবে।  এমনকি কমিউনিস্টরাও বোঝেনি, আর বোঝেনি বলেই কমিউনিস্টরা সমেত অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো লালকৃষ্ণ আদবানি, অটলবিহারির কেবল হাতই ধরেনি, তাদের দেশের সংসদীয় রাজনীতিতে পাকাপোক্ত জায়গা পেতেও সাহায্য করেছিল।  আজ সেই ইঁদুর এক প্রকান্ড বাঘের রূপ নিয়েছে।  তাহলে উপায়?

উপায় হল সেই শ্বাশ্বত বোধকে ফিরিয়ে আনা, যে বোধ এক উদার সমাজব্যবস্থার কথা বলে, যে বোধ বসুধৈব কুটুম্বকমের কথা বলে, যে বোধ থেকে দারা শুকো রামায়ণের ফারসি অনুবাদ করিয়েছিল, যে বোধ থেকে অব্রাম্ভণ তুলসিদাসের লেখা রামায়ণের পুঁথিকে আগলে রেখেছিল মুসলমান রাজকর্মচারী, যে বোধ থেকে গান্ধী উপবাসে বসেছিলেন, বলেছিলেন দিল্লিতে একটা মসজিদও যেন কেউ দখল করে না রাখে, একটা মুসলমানের ঘর যেন দখল করা না হয়, সেই বোধ যে বোধ থেকে জাতির পিতা নোয়াখালির দাঙ্গায় হিন্দু রমণীদের ওপর অত্যাচারের ঘটনায় কেঁদে ফেলেন, পাটনায় মুসলমানদের বস্তি জ্বালানো হলে আগুন নেভাতে চলে যান।  সেই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা যার থেকে জন্ম নিয়েছিল আমাদের সংবিধান, যে সংবিধান ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে সমান অধিকার দিয়েছে।  সেই সমস্ত বোধ, বুদ্ধি, চেতনাকে ফিরিয়ে আনতেই হবে।  কেবল ভোটের লড়াই এ আরএসএস – বিজেপিকে হারানো যাবে না।  তালে গোলে সবাই মিলে বিজেপিকে হারালেও হারাতেই পারে, হয়তো সেটা ২০২৪ এই সম্ভব।  কিন্তু তার দর্শন, তার হিন্দু রাষ্ট্রের আইডিয়া, তার যুক্তরাষ্ট্রিয় কাঠামো ভেঙে এক প্রবল শক্তিশালী ক্ষমতা কেন্দ্র গড়ে তোলার ইচ্ছে, তার এক নেতা, এক ধর্ম, এক ভাষার যে কর্মসূচি তাকে হারানো যাবে না।  এবং সে আবার ফিরে আসবে, আরও বেশি ক্ষমতা নিয়ে ফিরে আসবে।

জোট করে কেবল কিছু সংখ্যার জোরে তাকে কিছুদিনের জন্য আটকে রাখা যেতে পারে, সে চেষ্টা চলুক, কিন্তু আরও জরুরি তার ওই বিষাক্ত দর্শনের বিরুদ্ধে লড়াই করা।  সেই প্রেক্ষিতেই দেখতে চাই এই ভারত জোড়ো যাত্রাকে।  আরএসএস – বিজেপি তার মত করে এই যাত্রার সমালোচনা ঠাট্টা ইত্যাদি করছে, করবেই তো। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম জাতীয় রাজনীতিতে সেই বামেরা যারা কংগ্রেসের হাত ধরে চলতে চায়, যারা কংগ্রেসের সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনী আঁতাত করেছে, তারাও সমালোচনায় মুখর।  কেন রাহুল গান্ধী কেরালায় এত দিন দিলেন, কেন তিনি উত্তরপ্রদেশে মাত্র দুদিন ইত্যাদি।  প্রথমত এই ভারত জোড়োর যাত্রাপথ খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাবে কংগ্রেস নেতৃত্বের আসল লক্ষ্য হল নিজেদের আরও সংহত করা, পুরো যাত্রাপথের স্লোগান থেকে শুরু করে প্রচার সবটাই বিজেপির বিরুদ্ধে, কেবল একটা সরকার আর তার বিরুদ্ধে প্রচার নয়, এক বিষাক্ত দর্শনের বিরুদ্ধে প্রচার।  এই যাত্রা নির্বাচনে কংগ্রেসের জয় এনে দেবে? হতে পারে, কংগ্রেসের কিছু আসন বাড়তে পারে, অন্যদিকে বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলোর আসনও বাড়বে, সব মিলিয়ে ফলাফলের একটা অনুমান তো এখনই করা যায়, বিজেপি যদি জেতে তাহলেও তার নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা থাকবে না, এমন গরিষ্ঠতা থাকবে না যা দিয়ে সংবিধান পালটে দেওয়া যায়, যখন তখন যে কোনও আইন পাস করা যায়।  আবার এমন সম্ভাবনাও আছে যেখানে বিরোধী দলগুলোর এক মিলিজুলি সরকার তৈরি হল।  কিন্তু এই নির্বাচনী চালচিত্রেই এই ভারত জোড়ো যাত্রা আটকে নেই। 

তাকিয়ে দেখুন সেই অজস্র ছবি যা আমরা পাচ্ছি, কিশোর, কিশোরী, তরুণদের মধ্যে অনায়াস রাহুল হাঁটছেন কথা বলছেন, এই যাত্রা তাকে সত্যিই জননায়ক করে তুলছে।  আফসোস এটাই যে এই যাত্রা হয়ে উঠতে পারছে না সম্মিলিত বিরোধীদের।  দেশের প্রত্যেক বিরোধী দল কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা, রাজস্থান থেকে অরুণাচল প্রদেশ জুড়ে ভারত জোড়ো যাত্রায় নামলে দেশের চেহারাই বদলে যেত, হচ্ছে না।  বেশ তো বিরোধী দলের নেতারা নিজেদের দলের তরফেই উদ্যোগ নিন, রাস্তায় নামুন।  মানুষকে সঙ্গে নিন, এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, এই ফাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে মানুষের কাছে বিকল্প তুলে ধরুন।  মমতা বাংলায়, হেমন্ত সোরেন ঝাড়খন্ডে, তেজস্বী বিহারে, ইউপি তে অখিলেশ, তেলেঙ্গানায় চন্দ্রশেখর রাও, পঞ্জাব দিল্লিতে কেজরিওয়াল, ভগবন্ত সিং মান, মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরে, শরদ পাওয়ার ভারত জোড়ো যাত্রায় নামুন।  রাবণকে অজশ্র বাণ মেরে ক্লান্ত রাম লক্ষণ, তাদের তূনীরে রাখা সবচেয়ে শক্তিশালী বাণ ও খরচ হয়ে গেছে, তখন বিভীষণ এসে খবর দিয়েছিল রাবণের মৃত্যুবাণের।  সেই বাণ দিয়েই রাবণ বধ হয়েছিল। 

ঠিক সেরকম বিজেপির শক্তি তাদের ওই বিষাক্ত রাজনৈতিক দর্শনে।  কটা সাংসদ, কটা রাজ্য সরকার, কটা মুখ্যমন্ত্রীতে নয়।  খেয়াল করে দেখুন আরএসএস প্রধানের কথা, এই সেদিনও তিনি বলেছেন, মুসলমানদের সঙ্গে কোনও বিরোধ নেই, কিন্তু তাদের ভারতীয় হতে হবে, ভারতীয় সংস্কৃতিকে স্বীকার করতে হবে, হিন্দু রাষ্ট্রে কেউ অচ্ছুৎ নন।  শুনতে ভালো লাগল, এবার বিটুইন দ্য লাইনস কী বললেন, কী বলা আছে, সেটা দেখা যাক। তাঁরা বললেন মুসলমানদের ভারতীয় হতে হবে? মুসলমানরা ভারতীয় নন? মুসলমানদের ভারতীয় সংস্কৃতিকে স্বীকার করতে হবে, এ কথার মানে কী? আবহমান কাল থেকে চলে আসা এক মিশ্র সংস্কৃতির পুরোটাকে মানে? মানা যায় নাকি? কেউ বৈষ্ণব, কেউ শাক্ত, কেউ আমিষ, কেউ নিরামিষ, কেউ মূর্তি পুজো করে কেউ করে না।  কেউ মুরগি খায় কেউ খায় না, কেউ লুঙ্গি পরে, কেউ ধুতি পরে, কেউ দুটোই পরে।  কিন্তু আরএসএস চায় এমন এক ভারতীয় সংস্কৃতি, যা তাদের গুরু সাভারকার বলে গেছেন।  এই ভুখণ্ডে ভারতীয় তারাই যাদের জন্মভূমী এই ভারতবর্ষ, যাদের কর্মভূমী এই ভারতবর্ষ এবং যাদের পূণ্যভূমীও ভারতবর্ষ, তারাই ভারতীয়, যদি কারোর পূণ্যভূমী মক্কা, মদিনা, বেথলেহেম বা ভ্যাটিকান সিটি হয়, তাহলে সে ভারতীয় নয়, তাদের বিচারে দেশের কমবেশি ১৮/১৯% সংখ্যালঘু মুসলমান, খ্রিস্টান ভারতীয়ই নয়।  এই দর্শনের বিরুদ্ধেই লড়তে হবে।  সেই লড়াইতে ভারত জোড়ো যাত্রা এক উল্লেখযোগ্য ধাপ।  আপনি কংগ্রেসী নন? আপনি বামপন্থী, সমাজবাদী? ডেমোক্রাট? লিবারেল? সংবিধানে বিশ্বাস আছে? ভারতবর্ষের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যে বিশ্বাস আছে? তাহলে পারলে ভারত জোড়ো যাত্রায় যোগ দিন।  ফিজিক্যালি না পারলে মনে মনেই থাকুন ওইলক্ষ কোটি, অযুত মানুষের সঙ্গে, আমার জন্মভূমির শাপমোচন হোক।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০ ১১ ১২ ১৩১৪
১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯ ২০ ২১
২২ ২৩ ২৪ ২৫ ২৬ ২৭ ২৮
২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

মারণ রোগ ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে তনিষ্ঠার শরীরে! কী জানালেন অভিনেত্রী?
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
“ফের হামলা হবে, আরও ভয়ঙ্কর হবে,” ইরানকে হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
বিমান দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার অক্ষত অবস্থায় শ্রীমদ্ভগবদ গীতা
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
রকিভাই লুকে নেটপাড়া কাঁপাচ্ছেন দেব
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
আহমেদাবাদের পর ফের আকাশে দুর্ঘটনার আশঙ্কা
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
শুরু হবে প্রবল ঝড়বৃষ্টি, কী অবস্থা হবে দক্ষিণবঙ্গের?
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
কাজল লাগা চোখেই ঘুমের দেশে পাড়ি দিচ্ছেন? জানেন কি ক্ষতি হচ্ছে?
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
হুমায়ুন কবিরকে চরমপত্র দিল তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
এখনও মেনে নিতে পারছেন না, বিমান দুর্ঘটনায় কাকে হারালেন অভিনেত্রী পায়েল?
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
Aajke | কালীগঞ্জে বিজেপি হারবে অন্তত ৫০ হাজার ভোটে
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
লাকি নম্বর ছিল ‘১২০৬’, অদ্ভুতভাবে রুপানির মৃত্যুও হল সেই তারিখেই
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
শান্তনু সেনের বিরুদ্ধে চার্জশিট, এবার কী হবে?
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
পদপিষ্টের ঘটনা এড়াতে দিঘায় দীর্ঘ রথের রশি, নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team