ভাইরাসের শেষ কবে? কবে আবার প্রাণ ভরে শ্বাস নেবে মানুষ? করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কতটা সফল টিকা? চিকিৎসক দিবসে এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে কলকাতা টিভির ডিজিটাল ডেস্কের হয়ে কলম ধরলেন দেশের অন্যতম অতিমারী চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ডক্টর যোগীরাজ রায়।
দেড় বছর ধরে লড়াই করছি। মাঝে মধ্যে মনে হয় কোনও দুঃস্বপ্ন দেখছি না তো। প্রতিদিনের বেঁচে থাকাটা একেবারে বদলে গিয়েছে। তবে হার মানিনি। ভাইরাসকে সবাই মিলে রুখে দিয়েছি। আসলে সত্যিই তো এই রোগটার কোনও ওষুধ নেই। যে রকম গবেষণা এগিয়েছে সে রকমই এগিয়েছে টিকার ট্রায়াল। বিশেষজ্ঞরা দিনরাত পরিশ্রম করে গিয়েছেন। ল্যাবেরেটরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে গিয়েছেন। যদি কোনও সূত্র পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: কোভিশিল্ডকে ছাড়পত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের
এই রোগের ক্ষেত্রে তাই অক্সিজেনটাই একমাত্র ওষুধ। সাবধানতা আর মাস্ক হচ্ছে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। এই রকম পরিস্থিতি আগে দেখেনি আমাদের সময়। এতো মৃত্যু। এতো অসুখ। এতো বন্ধু, প্রিয়জন বিদায়। অনেক সময় দেখেছি লড়াই করতে করতে আমাদের অনেক সাথি চিকিৎসকেরা একেবারে বিধ্বস্ত। এত মৃত্যু দেখে ক্লান্ত। অনেক সময় এমনও হয়েছে মৃত্যু হয়েছে শুধুমাত্র পরিকাঠামোর অভাবে। তখন এতো অসহায় লেগেছে, এতো ধাক্কা লেগেছে যে, তা হয়ত বাকি জীবন জুড়েই আমার সঙ্গে বেঁচে থাকবে। তাই কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে, সিস্টেমকে বদলে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুন:ফের কমল দৈনিক সংক্রমণ, বাড়ছে সুস্থতার হার
শুধু ওষুধই নয়, টিকার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে বার বার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য সামনে এসেছে। কখনও বলা হয়েছে ২ মাস আবার কখনও বা ৮৪ দিনের ব্যবধানে দু’টো ডোজ নেওয়া যাবে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। আসলে ব্যাপারটা হল, খুব দ্রুত টিকা বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। এই ধরনের অতিমারীর ক্ষেত্রে টিকা আবিষ্কার করাটাই অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
আরও পড়ুন:ভ্যাকসিন কাণ্ডের পিছনে বিজেপি’র হাত? সন্দেহ মুখ্যমন্ত্রীর
এক্ষেত্রে সেটা হয়নি। ২০১৯-এর ডিসেম্বরে করোনা ভাইরাসে মানুষ প্রথম আক্রান্ত হন। তার মাত্র এক বছরের মধ্যেই বাজারে এসেছে ভ্যাকসিন। তাই বারবার গবেষণার অগ্রগতি অনুযায়ী বয়ান পাল্টেছেন বিজ্ঞানীরা। এই সময়টায় দেশে দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। আবার নতুন করে তৃতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কাও রয়েছে, এমনটাই জানাচ্ছে গবেষণা। তবে এটাই হয়তো শেষ। এরপর গতিপ্রকৃতি পাল্টে ধীরে ধীরে নিজের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে এই ভাইরাস। তবে এখন আগে দরকার টিকাকরণ। কিন্তু যা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো রয়েছে তাতে মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব টিকা নিতে হবে মানুষকে। এরমধ্যেই ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডের পর মানুষ ভয় পাচ্ছেন টিকা নিতে। কিন্তু এটা ছাড়া করোনা আটকানোর আর কোনও সম্ভাবনা নেই।
আরও পড়ুন: রাজ্যে ব্ল্যাকফাঙ্গাস কাড়ল আরও ১ প্রাণ
এই দেড় বছরে চিকিৎসকরা লড়তে লড়তে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি। তাই আজকের এই বিশেষ দিনেও আমাদের সংকল্প আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে করোনার হাত থেকে বাঁচিয়ে আনা। মানুষকে সুস্থ রাখতেই তো একদিন এই পেশায় এসেছিলাম। অনেক সময় পরিবেশ পরিস্থিতির চাপে কিংবা হয়ত কিছুটা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের পথ থেকে সরে গিয়েছি আমরা। অনেকেই বলেন চিকিৎসাটা আজকাল ব্যবসা হয়ে গিয়েছে। এটা হয়তো কিছুটা সামাজিক অবক্ষয়। রোগীরা আমাদের আত্মীয়। সবসময় রিপোর্ট নয়, প্রতিটা রোগীকে আলাদা আলাদাভাবে সময় দিতে হবে। তা হলেই আমাদের জয় নিশ্চিত।
অনুলিখন: দেবস্মিতা মণ্ডল