‘পড়েছি যবনের হাতে, খানা খেতে হবে একসাথে।’ প্রাচীন এই বাংলা প্রবাদটিও ইদানীং বদলে দিয়েছে যবন-সরকার। কোথায় ‘খানা’! খাদ্য তো দূরঅস্ত, দোকান-বাজার সব যেন তপ্ত কটাহ! হাত লাগালেই চামড়া খুলে যাচ্ছে। গোটা দেশ এই যবন-জমানার ‘খানা’য় তলিয়ে যাচ্ছে। খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের অভিলাষ মনে জমে ওঠার আগেই, খিদে তলপেটে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। জীবাণুকে যদি হারানো সম্ভবও হয়, ভারতের একটা বড় অংশ এবার খাদ্যাভাবে আধমরা হবে, সে বিষয়ে সংশয়ের অবকাশ থাকছে না। তার প্রধান কারণ, যবন সরকারের আর্থিক নীতি। না, অর্থনীতির গবেষক না হয়েও বলা যায়, কাঁচা টাকার এই একপেশে অধিকার সত্তার জোরেই খেটে খাওয়া মানুষ ভবিষ্যতে ক্রীতদাসের মতো খাটলেও ভরপেট খেতে পাবে কিনা সন্দেহ!
বাজার ঘুরলেই এই সহজ সত্যটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, টাকা যার, আনাজ-সবজি-মাছ-মুরগি তার। কারণ একটাই— পেট্রল ও ডিজেলের দামবৃদ্ধি। গত এক মাসে ১৭ বার দাম বেড়েছে পেট্রপণ্যের। এক মাসের ভিতর পেট্রলের দাম বেড়েছে ৪.০৯ টাকা। ওই সময়ের মধ্যেই ডিজেলের দাম বেড়েছে ৪.৬৫ টাকা। গত মঙ্গলবারই পেট্রলের দাম ২৬ পয়সা এবং ডিজেলের দাম ২৩ পয়সা বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই দোকানিরা বলছেন, লোকাল ট্রেন বন্ধ, মাল আনা-নেওয়ার খরচ বেড়েছে, বাজার খোলার সময় কমেছে, ফলে দাম তো বাড়বেই! কথাটাও নেহাত মিথ্যা নয়! কিন্তু সত্য যতই কটূ হোক না কেন, সংসার চালাতে গিয়ে চোখের জলে নাকের জলে হচ্ছে সাধারণ মানুষই। আলু, পটল, ঝিঙে থেকে ডিম-মুরগির দাম দু’দিন অন্তর চড়ছে। চাল, ডাল থেকে সরষের তেল মায় বিস্কুটের পর্যন্ত পারদ উঠছে। ওষুধের কথা উত্থাপন না করাই ভালো! তাহলে মানুষ কী খাবে? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যাপাধ্যায় থেকে অরবিন্দ কেজরীওয়াল, রাহুল-সোনিয়া-প্রিয়াঙ্কা ত্রয়ী, তেজস্বী কিংবা অখিলেশ যাদব— সকলেই পেট্রপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন। কিন্তু ভবি ভোলবার নয়। মমতা তো এও বলেছন, রান্নার গ্যাসের দাম যেভাবে বাড়াচ্ছে, তাতে ভাত ফোটানোর মতোও অবস্থা থাকছে না মানুষের। অথচ, দেখা যাচ্ছে— আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রল, ডিজেল, গ্যাসের দাম এভাবে বাড়েনি, বরং কয়েক দফায় কমেওছে।
তাহলে রহস্যটা কোথায়? রহস্য হচ্ছে শুল্ক বসিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘তোলাবাজি’। পেট্রল থেকে কেন্দ্র উৎপাদন শুল্ক বাবদ আয় করে লিটারে ৩২.৯০ টাকা এবং ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক বাবদ আয় ৩১.৮০ টাকা। এছাড়াও স্থানীয় সরকারগুলিরও সেস ধার্য হয়। একথা ঠিক ভরতুকি দিয়ে স্বনির্ভর দেশ গড়া যায় না। কিন্তু, ‘সব চাইতে ভালো খেতে গরিবের রক্ত’ই বা কোন চাণক্যনীতির পাঠ!
প্রকৃত অর্থে এখন গণতন্ত্রের মুখোশে রাজতন্ত্র চলছে দেশজুড়ে। ভরপেট না খেলেও রাজকর দেওয়া চাই। কারণ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ। আর এই অবস্থায় যদি সন্দীপনের পাঠশালাটি বসেও, তাহলে তাতে আগুন জ্বালাও। লেখাপড়া শিখলে অনাহারে মরার ভয় দেখানো প্রেতাত্মারা চারপাশে ঘুরছে। মানুষ অধিকার আর অনধিকারের তারতম্য ভুলতে বসেছে। রবীন্দ্রনাথও বহু বছর আগে বলেছিলেন যে, অধিকারবোধ গড়ে তুলতে হলে মানুষকে লিখতে-পড়তে শেখাতে হবে। আর তাতেই যবনরাজের আপত্তি। ফলে, রামরাজ্যের প্রজাদের ধর্মরক্ষায় যে শূলে চড়তে হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ থাকে কী করে?
এই অবস্থায় কেষ্টা বেটাই চোরের মতো দশা হয় করোনার। যা কিছু ঘটছে, তার জন্য দায় চাপছে ক্ষুদ্রতর জীবাণুটার ঘাড়েই। গোটা বিশ্বে বিক্রি পড়েছে বলে দাম কমছে অপরিশোধিত তেলের। আর এদেশে শুল্কের নামে লুঠতরাজ চলছে। যাতে মুনাফাভোগী হচ্ছে উচ্চকোটির দু’একজন শিল্পপতি। সহজেই বোঝা যাচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কারও সন্তানই আর দুধেভাতে থাকার কথা কল্পনাও করতে পারবে না! যবন-সম্রাটকুলের যেন মনে থাকে, গণতন্ত্রে সরকার হচ্ছে পদ্মপাতায় জলের মতো….। পক্ষাঘাতগ্রস্ত বৃদ্ধ শাহজাহানকেও আগ্রাদুর্গে বন্দিদশায় দর্পণের প্রতিচ্ছবিতে তাজমহলের শোভা দেখতে হতো! শুনছি তো দিল্লিতেও অমন কী একটা যেন গড়ে তুলছেন কেউ একজন….!