ডায়ে আনতে বাঁয়ে কুলোয় না দশা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। নানা কৌশলে দলের বাগীদের বাগে আনতে না আনতেই পেগসাস উপদ্রবে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের বিজেপি জেরবার। রাজ্যে রাজ্যে দল সামাল দিতে নাজেহাল তাঁরা। সম্ভাব্য বিদ্রোহ সামাল দিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদল থেকে মুখ্যমন্ত্রী বদল কোনও রাস্তাই বাকি রাখেননি মোদি। কিন্তু তাতেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ব্যবধান মাত্র চার মাস। তাতেই দেশের তিন রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদলাতে হয়েছে জে পি নাড্ডাদের। বাংলায় ক্ষমতা দখল সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। উল্টে সেই বাংলা থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুরু হয়েছে বিরোধী ঐক্যের মহড়া। এখন রাজধানীর বুকে মোদি-শাহের বাহিনীর ঘাড়ে শ্বাস ফেলছেন তৃণমূল নেত্রী। আর তাঁকে ঘিরে দেশের বিরোধী সমীকরণ আরও অস্থির করে তুলেছে বিজেপিকে।
আরও পড়ুন: কর্ণাটকের নয়া মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই
দক্ষিণে বিজেপির শিবরাত্রের সলতে, কর্ণাটক। শিল্পে, অর্থনীতিতে দেশের অন্যতম এই দক্ষিণী রাজ্যে জাতপাতের সমীকরণ রাজনীতির অভিমুখ নির্ধারণ করে থাকে। লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ভুক্ত বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা ইয়েদুরাপ্পাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য করল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আগামী ২০২৩ সালে কর্ণাটক বিধানসভার নির্বাচন। তার পরের বছর সরাসরি মোদির পরীক্ষা, অষ্টাদশ লোকসভার ভোট। এ দিকে সেই কর্ণাটকে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলের এক বড় অংশের বিধায়ক বিদ্রোহের পথে। ইয়েদুরাপ্পাকে আর নেতা মানতে চাইছেন না তাঁরা। যদিও দুর্নীতি থেকে যৌন কেলেঙ্কারিতে কিছুটা জেরবার ছিল ইয়েদুরাপ্পার মন্ত্রিসভা। অবশেষে বয়সের ও শারীরিক অসুস্থতার অজুহাত দিয়ে তাঁকে ইস্তফা দিতে বলা হল। অথচ ২০১৮ সালে বিধানসভা ভোটে হেরে গিয়েও বিজেপি কংগ্রেস-জনতা দল (সেকুলার) বিধায়ক ভাঙিয়ে বিজেপি সরকার গঠনে এই ইয়েদুরাপ্পাকেই কাজে লাগিয়েছিলেন দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় ভবনের কর্তারা। অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে ইয়েদুরাপ্পার ইস্তফাপত্র পকেটে নিয়ে মোদি-শাহ’রা পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী খুঁজতে বেরিয়েছেন। দলের অন্দরের বিক্ষোভ সামলে নতুন মুখ, তার ওপর রয়েছে জাতপাতের জটিল অঙ্ক, প্রচন্ড চাপে পড়ে গিয়েছেন মোদি। বিজেপির মতো কঠোর অনুশাসন নির্ভর দলের সাংগঠনিক বাঁধুনি এই দক্ষিণী রাজ্যে আলগা হয়ে পড়েছে। ব্রাহ্মণ সন্তান প্রহ্লাদ যোশীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আরএসএসের পছন্দ। লিঙ্গায়েত সম্প্রদায় তাতে কতটা ক্ষুণ্ন হতে পারে, জল মাপছেন মোদি-শাহ। রাজ্যের আরেক প্রভাবশালী ভোক্কালিগা সম্প্রদায়। তাদের প্রতিনিধি বিজেপি নেতা সিটি রবিও তাল ঠুকছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি দখলে। শেষ পর্যন্ত যিনি মুখ্যমন্ত্রী হন না কেন মোদি-শাহের কাছে পথটা আগামীর জন্য মোটেই মসৃণ নয় সেটা স্পষ্ট। কেননা,বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে সরে যেতে বলেও সেই ইয়েদুরাপ্পাকেই আপাতত সরকার চালিয়ে যেতে বলার মধ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অসহায়তা প্রকট হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: BREAKING: বাংলার হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভ্যাকসিন চাইলেন মমতা
সাংগঠনিক কোন্দল মেটাতে ইয়েদুরাপ্পার আগেও একাধিক রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদলাতে বাধ্য হয়েছে বিজেপি। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে বিজেপি শাসিত তিন রাজ্যে চারবার মুখ্যমন্ত্রী বদলে দলীয় বিদ্রোহ ধামা চাপা দিতে হয়েছে মোদি-শাহকে। গত মার্চ মাসে উত্তরাখণ্ডে ত্রিবেন্দ্র রাওয়াতকে সরিয়ে তিরথ সিং রাওয়াতকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল। তাতেও দলীয় কোন্দলে রাশ টানতে পারেননি মোদি-শাহ। শেষতক গত জুন মাসে ফের বদল, মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসানো হলো পুষ্কর সিং ধামিকে। সর্বানন্দ সনোয়াল অসমের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। গত মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনে লড়ে জিতেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বারের জন্য তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়া হল না সর্বানন্দের। নিজের অনুগামীদের নিয়ে রীতিমতো ব্ল্যাকমেল করে কংগ্রেস ছুট বিজেপি নেতা হেমন্ত বিশ্বশর্মা মুখ্যমন্ত্রীর আসন দখল নিয়েছেন। স্বভাবতই অসম বিজেপিতে সর্বানন্দ অনুগামীদের সঙ্গে হেমন্ত বাহিনীর সংঘাত প্রকাশ্যে এসে পড়ে। অবস্থা সামাল দিতে সর্বানন্দকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই করে দিতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। তাতেও স্বস্তি নেই। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্তের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে প্রতিবেশী মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জরামথাঙ্গার বিরোধ তুঙ্গে। সীমান্তে অস্থিরতা মোকাবিলায় অসম রাইফেলস এর ছয় কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। উল্লেখ্য, মিজোরামের শাসক দল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট এনডিএ’র শরিক। কৃষক আন্দোলনের জেরে একাধিক শরিক এনডিএ ছেড়েছে। তার পরে ফের শরিক দলের সঙ্গে সংঘাত। স্বভাবতই এই ঘটনাও মোদির বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে। রাজস্থানে প্রাক্তন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার অনুগতদের নিয়ে রাজ্য দলের কোন্দল প্রকাশ্যে।
আরও পড়ুন: দেশ জুড়ে চাপের মুখে CAA নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের
একদিকে কোভিড ও তার প্রতিষেধক জোগাড়ে চূড়ান্ত অপ্রস্তুতি, রাজধানীর বুকে প্রায় বছর ঘুরতে চলা কৃষক আন্দোলন, দেশের সামগ্রিক আর্থিক অধোগতি-এইসব বোঝার ওপর শাকের আটি-সম পেগসাস আড়ি পাতা বিতর্ক। যাকে ঘিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিরোধী ঐক্যের সম্ভাবনা উজ্জ্বলতর হচ্ছে। বিশেষ করে কংগ্রেসের পরিবর্তিত অবস্থান। যার জন্য বিরোধী জোটের নানা সমস্যা হতো, যার পরোক্ষ সুবিধা নিয়ে বিজেপির সংসদীয় বাজিমাত, সেই কংগ্রেস ইতিমধ্যেই তৃণমূলের কাছে সখ্যের হাত এগিয়ে দিয়েছে। যার অর্থ মমতাকে সম্ভাব্য বিরোধী জোটের অভিন্ন নেত্রী হিসেবে মেনে নেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন সোনিয়া -রাহুল গান্ধীরা। অর্থাৎ, একদিকে ক্রমবর্ধমান দলের ঘরোয়া কোন্দল অন্যদিকে পেগসাস বিতর্কে চ্যালেঞ্জের মুখে মোদি মিথ।